HSC ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ~ Exam Cares

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

শামসুর রাহমান

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

💕 পাঠ সহায়ক অংশ

সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখনফল

✓ ‘মাতৃভাষা’ বাংলার জন্য এদেশের ভাষাপ্রেমিক মানুষের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।

✓ ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে কীভাবে বাঙালির অধিকার আদায় সংগ্রামে প্রভাব ফেলেছে, সেই সম্পর্কে অবগত হবে।

✓ নিজের ভাষার সম্মান রক্ষার্থে এ দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে পারবে।

✓ ১৯৬৯ এর গণজাগরণ ও জাতিগত শোষণের তীব্র প্রতিবাদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।

✓ ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে-স্তবকে, ভাষার জন্য জীবনদানকারীদের মহিমা মূর্ত হয়ে ওঠার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে।

✓ বাঙ্গালির রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।

💕 পাঠ পরিচিতি

“ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯” শীর্ষক কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে। “ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯” সংগ্রামী চেতনার কবিতা, দেশপ্রেমের কবিতা, গণজাগরণের কবিতা।

১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণআন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল, কবিতাটি সেই গণজাগরণের পটভূমিতে রচিত। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ’৬৯-এ। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে, হাটবাজার থেকে, কলকারখানা থেকে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। শামসুর রাহমান বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন এই কবিতায়।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

কবিতাটিতে দেশমাতৃকার প্রতি জনতার বিপুল ভালোবাসা সংবর্ধিত হয়েছে। দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে কবি গভীর মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্ত করে তুলেছেন। কবিতাটিতে একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মহুতির মাহাত্ম্যের প্রগাঢ়তা লাভ করেছে। গদ্যছন্দ ও প্রবহমান ভাষার সুষ্ঠু বিকাশে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন।

'ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯' কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

💕 কবি পরিচিত

নাম : শামসুর রাহমান

জন্ম তারিখ : ২৩ অক্টোবর, ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ।

জন্মস্থান : মাহুতটুলা, ঢাকা।

পিতৃক নিবাস : পাড়াতলী, রায়পুরা, নরসিংদী।

পিতার নাম : মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।

শিক্ষাজীবন : মাধ্যমিক : পোগাজ স্কুল (১৯৪৫), ঢাকা।

উচ্চ মাধ্যমিক : ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (১৯৪৭)।

উচ্চতর শিক্ষা : বিএ (অনার্স), এম.এ (ইংরেজি); ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল।

পেশা ও কর্মজীবন : সাংবাদিকতা । সম্পাদক-দৈনিক বাংলা। সভাপতি-বাংলা একাডেমি।

সাহিত্য কর্ম কাব্য : প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিরালোকে দিব্যরথ, নিজ বাসভূমে, বন্দী শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এক ফোঁটা কেমন অনল, বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রভৃতি উলে­খযোগ্য।

উপন্যাস : অক্টোপাস, নিয়ত মন্তাজ, অদ্ভুত আঁধার এক, এলো সে অবেলায়।

প্রবন্ধ : আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ।

শিশুতোষ : এলাটিং বেলাটিং, ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো, গোলাপ ফোটে কুকীর হাতে, রংধনু সাঁকো, লাল ফুলকির ছড়া।

অনুবাদ : ফ্রস্টের কবিতা, হ্যামলেট, ডেনমার্কের যুবরাজ।

সম্পাদনা : হাসান হাফিজুর রহমানের অপ্রকাশিত কবিতা।

পুরস্কার ও সম্মাননা পুরস্কার : আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯),

একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯১)।

মৃত্যু মৃত্যু তারিখ : ১৭ আগস্ট, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ।

💕 উৎস পরিচিতি

‘ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯’ শীর্ষক কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে।

💕 বস্তুসংক্ষেপ

বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয়তায় প্রতিষ্ঠিত, অতি আধুনিক কাব্যধারার সার্থক রূপকার, নাগরিক কবি শামসুর রাহমান। কবিতার সা¤প্রতিকতম বিবর্তনে তিনি কতটা সংযোগ সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন তার উজ্জ্বলতম নিদর্শন সেটা ‘ফেব্রুয়ারী-১৯৬৯’ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। পরিপার্শ্ব, সমাজ ও সময় সজ্ঞানতা, উপমা ও চিত্রকল্প, বাস্তববাদী বিষয় নির্বাচনে তিনি কবিতাটিকে অতুলনীয় করে তুলেছেন।

‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় সমকালীন জীবনের আশা-আকাঙক্ষা এবং সময় বাস্তবতার দিকটি তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। এতে নাগরিক জীবনের কৃত্রিমতা এবং অসারতার দিকটি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন চিত্রকল্পের মাধ্যমে। কবি নিজেকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে নিজে সম্পৃক্ত করে দেখেছেন। যারা অনবরত জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। জীবনের টানেই পৃথিবীর পথে বেরিয়েছি সকলে-এটাই কবির জীবনদর্শন। কবিতায় জীবনের প্রতি কবির গভীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনের বাস্তবমুখিতা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রাকৃতিক জীবনের বিচিত্র চিত্রে কবি এদেশের স্বাধীনতার ভাবী রূপ অবলোকন করেছেন।

আবহমান বাংলার ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ এবং বাঙালির সংগ্রামী চেতনার পরিচয় তুলে ধরেছেন কবিতার শেষাংশে। কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে তিনি দেখেছেন শহিদদের রক্তের ঝলকানি, ঘাতকদের আঘাতে বাঙালির মানবিকতা তছনছ হতে দেখেছেন। শহিদদের চেতনা বাংলার প্রকৃতিতে ভাস্বর হতে দেখেছেন। সালাম বরকতের রক্তে দুঃখিনী মাতার চোখের জলে আমাদের প্রাণ কীভাবে শিহরিত হয় ১৯৬৯ সালের প্রেক্ষাপটে কবি তা ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় উপস্থাপন করেছেন।

💕 নামকরণ

‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ শীর্ষক কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে এর বিষয়বস্তু আঙ্গিকে। ফেব্রুয়ারি বাঙালির চেতনার প্রতীক। ফেব্রুয়ারি বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কবি শামসুর রাহমান ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ শীর্ষক কবিতায় সেই চেতনাকেই মূর্ত করে তুলেছেন। তিনি এতে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণ-আন্দোলন শুরু হয় তা তুলে ধরেছেন। এ কবিতায় সেই সময়ের জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার দিকটি ফুটে উঠেছে।

১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন কীভাবে উনিশ’শো ঊনসত্তরে গণ-অভ্যুত্থানের রূপ নেয়, শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে কীভাবে অংশগ্রহণ করে এই কবিতায় তাও তুলে ধরা হয়েছে । এ কবিতায় দেশমাতৃকার প্রতি গভীর অনুরাগ, মুক্তির আকুতি ফেব্রুয়ারিতে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙে’৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে আত্মদানকারী শহিদদের রক্তের প্রতিফলন বলে তিনি মনে করেছেন। সেগুলোতে কবির চেতনার রং কীভাবে লেগে আছে তা তুলে ধরেছেন।

এভাবে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ দেশে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছিল, সেই চেতনাই বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৬৯-এ গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। কবি সেই সময়ের গণজাগরণ ও চেতনাকে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায় বাণীবদ্ধ করেছেন এ কবিতায়। এসব দিক বিবেচনায় কবিতার নামকরণটি যথার্থ হয়েছে।

💕 শব্দার্থ ও টীকা

আবার ফুটেছে দ্যাখো …

আমাদের চেতনারই রং ✑ প্রতি বছর শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। কবির মনে হয় যেন ভাষা-শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। তাই একুশের কৃষ্ণচূড়াকে কবি আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চান। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের ত্যাগ আর মহিমা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে-স্তবকে।

মানবিক বাগান ✑ মানবীয় জগৎ। মনুষ্যত্ব, ন্যায় ও মঙ্গলের জগৎ।

কমলবন ✑ কবি মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের জগৎ বোঝাতে ‘কমলবন’ প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন।

বুঝি তাই উনিশশো …

থাবার সম্মুখে ✑ ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র-অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন উনিশশো ঊসত্তরে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য। এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন আসাদুজ্জামান, মতিউর, ড. শামসুজ্জোহা প্রমুখ। এ অংশে কবি শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও আত্মাহুতি দেওয়া বীর জনতাকে ভাষা-শহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছেন।

সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ ✑ ফুল বলতে এখানে বাংলা ভাষা বোঝানো হয়েছে।

💕 বানান সতর্কতা

কৃষ্ণচূড়া, বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধ, আস্তানা, সন্ধ্যা, সন্ত্রাস, ভুলুণ্ঠিত, ফ্ল্যাগ, রৌদ্র, দুঃখিনী, হরিৎ, অবিনাশী, ক্ষণ, চত্বর,উচ্চারণ, শ্যামল।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০১

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

কপালে কব্জিতে লাল সালু বেঁধে

এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,

লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক

হাতের মুঠোয় মৃত্যু চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,

নিম্নবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে

আর তোমাদের মত শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে।

ক. শহরের পথে থরে থরে কী ফুটেছে?

খ. ‘এ-রঙের বিপরীত আছে অন্য রং’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার যে দিকটিকে তুলে ধরে তার পরিচয় দাও।

ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার খণ্ডাংশ- যৌক্তিকতা দেখাও।

১নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।

খ. অনুধাবন

✍ “এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং” বলতে প্রতিবাদ বা গণজাগরণের কথা বলা হয়েছে।

✍ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চালায়। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এর প্রতিবাদে এদেশের সাধারন মানুষ ক্ষুদ্ব হয়ে ওঠে। এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করার দিকটি তুলে ধরেছে।

✍ বাঙালি জাতি বীরের জাতি। এই জাতি যুগে যুগে শাসক শ্রেণির বিভিন্ন অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে সংগ্রাম করেছে, ছিনিয়ে এনেছে মুক্তির আস্বাদ। বাঙালি কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র তথা সকল শ্রেণিপেশার মানুষ একত্রিত হয়ে অন্যায়কে পদদলিত করে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে।

✍ উদ্দীপকে এমনই এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বাঙালি জনতা। কপালে ও কব্জিতে লাল সালু বেঁধে এসেছে কারখানার শ্রমিক, লাঙল কাঁধে এসেছে কৃষক। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, করুণ কেরানি, নারী-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর এমনকি ভবঘুরেরাও এসেছে আন্দোলন করার জন্য। তীব্র সংগ্রামে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতাতেও এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে জাতিগত শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে ওঠে সমগ্র বাঙালি জাতি, প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ, হাটবাজার, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকার রাজপথে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করে। সুতরাং বলা যায় যে, ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার গণমানুষের এই আন্দোলন করার দিকটিই উদ্দীপকটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ উদ্দীপকে যে বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার খন্ডাংশ- মন্তব্যটি যথাযথ।

✍ দেশ ভাগের পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের ভাষার ওপর বিভিন্নভাবে আঘাত হানে। কিন্তু বীর বাঙালি রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করে। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শোষণের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে আমরা ঘাতক পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে অনেক সংগ্রাম আর আন্দোলন করি। আর এই মহান সংগ্রামগুলোতে শহিদ হয়েছেন বীরের জাতি বাঙালির অনেক তরুণ-যুবা।

✍ উদ্দীপকটিতে একটি আন্দোলন-সংগ্রামরত সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি লক্ষ করা যায়। কারখানার লোহার শ্রমিক, লাঙল কাঁধে কৃষক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, কেরানি, নারী, বৃদ্ধ সবাই এসেছে আন্দোলন করার জন্য। ভবঘুরে বা পথশিশুরাও এই আন্দোলন থেকে বাদ পড়ে নি। এই আন্দোলনটি মূলত ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার গণআন্দোলনেরই নামান্তর। কেননা সেই আন্দোলনেও কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা সকলে দল বেঁধে অংশগ্রহণ করে। তবে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় একমাত্র আলোচিত দিক এটিই নয়, আরও দিক রয়েছে।

✍ ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় একুশের চেতনার দিকটি তথা একুশের স্মৃতিচারণার বিষয়টি এসেছে। এছাড়াও পথ-ঘাট সারাদেশে ঘাতকদের আস্তানা ছেড়ে যাওয়া, মানবিক বাগান, কমলবন তছনছ হওয়ার দিকগুলোও আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় উদ্দীপকের কবিতায় মোটেও আলোচিত হয় নি। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০২

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

রাশেদের গ্রামের বাড়ি সিলেট। পেশায় সে কেরানি ছিল। সে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনে শহিদ হয়। তার ছোট্ট মেয়ে শেফা কাল বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে। আজ হাতে মেহেদি পরেছে। সকালে রাঙাহাত দেখে মায়ের চোখ ছলছল করে। লাল রং-এর এমন দাগ রাশেদের শরীরে সেদিন দেখেছিলেন তিনি। আজও রক্তবর্ণ তার চোখে চেতনার রং হয়ে ভাসল।

ক. ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় কৃষ্ণচূড়ার লাল রং কিসের প্রতীক?

খ. ‘ফুল নয়, ওরা শহিদদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে রাশেদের মায়ের অশ্রু ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কোন আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “আজো রক্তবর্ণ তার চোখে চেতনার রং হয়ে ভাসল”-উক্তিটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার নিরিখে পর্যালোচনা কর।

২নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ কৃষ্ণচূড়ার লাল রং চেতনার প্রতীক।

খ. অনুধাবন

✍ ফাগুন মাস বসন্তের মাস।

✍ ফাগুন মাসের ৮ই ফাগ্লুন সংগঠিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ শরীরে জামায় এঁকে দেয় মৃত্যুর আলপনা। তাই কৃষ্ণচূড়া ফুল আর ফুল নয়, তা শহিদের রক্তের বুদ্বুদ ফেনায় ওঠা ফুল।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপকের রাশেদের মায়ের অশ্রু ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার ঊনসত্তরের আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়।

✍ বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার অনন্য প্রকাশ ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের শহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা পায় মর্যাদার আসনে। উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই এ আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে।

✍ উদ্দীপকে ভাষা শহিদ রাশেদের মতো শত শত মানুষ সেদিন ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমেছিল। এদের কেউ কেউ শহিদ হয়েছে। শহিদ রাশেদের জননীর মতো অন্যান্য শহিদদের জননীরাও তাদের সন্তানের জন্য চোখের জল ফেলে, হারানো ছেলে মেয়ের পুত্র-কন্যার স্মৃতি রোমন্থন করে। তেমনি রাশেদের মা তার নাতনির হাতে মেহেদি রং দেখে ফিরে গেছেন ছেলের রক্তে ভেজা জামা দেখার স্মৃতিতে। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায়ও একইভাবে কবি ফাগুনে কৃষ্ণচূড়ার লাল রংকে চেতনার রং হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ “আজও রক্তবর্ণ তার চোখে চেতনার রং হয়ে ভাসল”- উক্তিটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার আলোকে যথার্থ।

✍ ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষার মাস নয়, একই সাথে আবেগের এবং ক্ষোভের। রক্তের বদলে যদি ভাষা হয় তবে চেতনার বদলে বাঙালি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। আলোচ্য কবিতায় যেমন একুশের কথা বারবার এসেছে, তেমনি উদ্দীপকে একুশকে প্রকাশ করা হয়েছে প্রতীকের মাধ্যমে।

✍ উদ্দীপকে কেরানি রাশেদ ভাষা আন্দোলনে গিয়ে শহিদ হয়। এ ঘটনার বহুদিন পর তার মেয়ে শেফা মেহেদি হাতে বিয়ের সাজে সেজেছে। নাতনির হাতের মেহেদির লাল রং দেখে তার দুঃখিনী মায়ের শহিদ ছেলের কথা মনে পড়ে যায়। লাল রং তার চোখে চেতনার রং হয়ে দেখা দেয়। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায়ও একুশের চেতনার কথা বলা হয়েছে। বাঙালির প্রথম প্রেরণার সিঁড়ি ফাগুন বারবার এসে কৃষ্ণচূড়া প্রতীকের মাধ্যমে তার লেগে থাকা স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। একুশের চেতনা ভোলার নয়। শোকে ও সংগ্রামে এ চেতনাই জাতিকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে স্বাধীনতা। শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বলেই একুশের রং লাল।

✍ উদ্দীপকে লাল রং দেখেই রাশেদের মায়ের চোখ জলে ভরে ওঠে, ভাষা হারিয়ে যায়। বুকে বেদনার আবহ সৃষ্টি হয়। তবুও এই বলে শান্তি পায় একুশ নিয়েছে প্রাণ দিয়েছে সম্মান, অহংকার, বীরত্ব আর মুখের ভাষা। আর তাই কৃষ্ণচূড়ার রক্তবর্ণ চেতনার রং, একুশের রং।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

বেলালের বাড়ি সরুদিয়া গ্রামে। ছোট্টবেলায় সে বাবার সাথে ঢাকার রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করত। একদিন বাবা তাকে সঙ্গে না নিয়েই বেরিয়ে যায়। দুদিন বাবা বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার গুলিবিদ্ধ লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাওয়া গেল। বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। কপালে ফিতা বাঁধা। তাতে লেখা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।

ক. থরে থরে কৃষ্ণচূড়া কোথায় ফুটেছে?

খ. একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং কেন?

গ. বেলালের বাবার মৃত্যুর সাথে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কাদের তুলনা করা চলে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”- মূলত ’৬৯-এর গণআন্দোলনের চেতনায় সমৃদ্ধ- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ থরে থরে কৃষ্ণচূড়া শহরের পথে ফুটেছে।

খ. অনুধাবন

✍ কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তবর্ণ ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশাত্মবোধকে উজ্জীবিত করে তুলে বিধায় একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলা হয়েছে।

✍ ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য সালাম, রফিক, জব্বার, রবকতসহ অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। তাই ফাগুনে কৃষ্ণচূড়ার রক্তবর্ণ একুশকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপকের বেলালের বাবার মৃত্যুর সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় বর্ণিত ভাষা শহিদদের মৃত্যুর সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ সামন্তবাদী স্বৈরশক্তির হাত থেকে বাংলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে বাঙালিকে বারবার আন্দোলনে নামতে হয়েছে। অনেক রক্তপাত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে কয়েকশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে অর্জিত হয়েছে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। উদ্দীপকের বেলালের পিতার মৃত্যু এবং কবিতার ’৬৯-এর আন্দোলন মূলত এরই ধারাবাহিকতা মাত্র।

✍ উদ্দীপকে বেলালের বাবা একজন দেশপ্রেমিক ও অধিকার সচেতন মানুষ। তাই তিনি স্বৈরশাসন মেনে নিতে পারেননি বলে গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তার দাবি ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাক। কেননা স্বৈরশাসন জাতিকে অগ্রগতি হতে দূরে রাখে। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কথা উলে­খ রয়েছে। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। জাতিগত আদর্শ ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সারাদেশ থেকে মানুষ জমায়েত হয়েছিল ঢাকায়। উদ্দীপকে সে দিকটিই সাবলীলভাবে ব্যক্ত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” মূলত ’৬৯-এর গণআন্দোলনের চেতনায় সমৃদ্ধ-উক্তিটি যথাযথ।

✍ কবি শামসুর রাহমান তার ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের যে চিত্র অঙ্কন করেছেন তাতে বাঙালির চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকেও এর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

✍ উদ্দীপকে যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তাতে বাঙালির আত্মমর্যাদা ও অধিকার সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বেলালের পিতা মারা গেলেও তার চেতনার মৃত্যু ঘটেনি। এক্ষেত্রে তার মাথার ফিতায় লেখা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগানটি মূলত তার চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে যারা জীবনদান করেছেন, তারা দেশের সূর্যসন্তান। এরূপ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। অবশেষে নিজেদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে।

✍ কবি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। উদ্দীপকের বেলালের বাবার আন্দোলন তাই সে চেতনারই প্রতিফলন। এক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি শতভাগ সঠিক।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য

ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।

চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য

কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।

ক. বরকত কোথায় বুক পাতে?

খ. ‘সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা’- কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কোন বিষয়টি উঠে এসেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতা সমাজবাস্তবতারই ধারক-বাহক”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ বরকত ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে।

খ. অনুধাবন

✍ ভাষা আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময়কালকে বোঝাতে ‘সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা’ বলা হয়েছে।

✍ ’৫২ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন হওয়ার প্রেরণা পায়। ’৫২-এর পর বাঙালি আরও কিছু বিপ্লব ও সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, যা ঊনসত্তরে এসে আরও বিস্তৃতি লাভ করে। প্রশ্নে সালামের কথায় সে কথাই ফুটে উঠেছে।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার প্রতিবাদী চেতনার দিকটিই উঠে এসেছে।

✍ যখন অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন আর কোনো অন্যায়-অত্যাচারকে মেনে নেয়া যায় না। আর তখনই মানুষ সোচ্চার হয়ে ওঠে সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে। আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায়ও এরই ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যায়।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, একটি বৈরী সময়ের দৃশ্যের অন্তরালে জাতির সংকটময় অবস্থাকে নির্দেশ করা হয়েছে। যখন সবাই ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে, তখন ফুল দিয়ে খেলা করা তথা আর চুপ থাকার সময় নেই। অর্থাৎ কথাটির মধ্য দিয়ে লেখক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায়ও আমরা একটি প্রতিক‚ল সময়ের চিত্র দেখি। যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব নিশ্চি‎হ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে, তখন আরাম-আয়েশে ও নিশ্চিন্তে নিষ্ক্রিয় থাকা বাট্টালিদের অচিরেই নেমে আসতে হয় রাজপথে। তারাও জেনে যায়, বাঁচতে হলে সংগ্রাম করতে হবে। তখন তারা তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে নিজেদের দাবিকে সামনে নিয়ে আসে। অধিকার আদায়ের এই সচেতনতা তথা প্রতিবাদী চেতনাই উদ্দীপকে মূর্ত হয় উঠেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতা সমাজ বাস্তবতারই ধারক-বাহক, উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এর নির্মম বাস্তবতার প্রখর উপস্থিতি দেখি।

✍ সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার উত্তাপ সঞ্চারিত হয়েছে উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার শরীরে। যেখানে নির্মম বাস্তবতায় প্রখর উপস্থিতি লক্ষণীয় এবং আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।

✍ উদ্দীপকে যে সামাজিক অবস্থা ফুটে ওঠে, তা সুখকর নয়। বেঁচে থাকার সুকুমার জীবনের স্বপ্ন এখানে সুদূর পরাহত যেখানে চামড়া কাঠফাটা রোদ সেঁকে। সেখানে ফুল নিয়ে লেখার দিন নয় বলার মধ্য দিয়ে কবি সবাইকে প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বোঝা-ই যাচ্ছে, বৈরী সময় কতটা প্রখরভাবে উপস্থিত এখানে। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায়ও উঠে এসেছে নষ্ট সময়ের আলেখ্য। যেখানে বাঙালির মুখের ভাষাকেই কেড়ে নিতে উদ্যত কিছু সামন্তবাদী অপশক্তি।

✍ নির্বিচার হত্যা এবং অন্যায়-অত্যাচার দ্বারা সামন্তবাদী অপশক্তি বেঁচে থাকার স্বাভাবিক পরিবেশকেও নষ্ট করে দেয়। ফলে বাঙালি হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। আর এই প্রতিবাদ ও দাবি-দাওয়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে জীবনের মূল্য দিতে হয় অনেককে। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা নির্মম সমাজবাস্তবতা তীব্রভাবে ধারণ করেছে।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ওরা কারা বুনো দল ঢোকে

এরি মধ্যে (থামাও, থামাও) স্বর্ণশ্যাম বুক ছিঁড়ে

অস্ত্র হাতে নামে সান্ত্রী কাপুরুষ, অধম রাষ্ট্রের

রক্ত পতাকা তোলে, কোটি মানুষের সমবায়ী

সভ্যতার ভাষা এরা রদ করবে কীভাবে?

ক. ‘আবার সালাম রাজপথে নামে’-কখন?

খ. ‘সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ’- কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার সাদৃশ্য চি‎িহ্নত কর।

ঘ. “কোটি মানুষের সমবায়ী সভ্যতার ভাষা এরা রদ করবে কীভাবে”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৫নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ ‘আবার সালাম রাজপথে নামে’ -উনিশশো ঊনসত্তরে।

খ. অনুধাবন

✍ ‘সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ’-পঙ্ক্তিটিতে সেই ফুল বলতে বাংলা ভাষাকে নির্দেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়।

✍ বাংলা ভাষারূপ এই ফুল ফোটে এক ভয়াল বাস্তবতায়। এই ভাষা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। প্রাণ ছাড়া যেমন বাঁচা অসম্ভব, তেমনি বাংলা ভাষা ছাড়াও আমাদের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। মায়ের ভাষার জন্য আত্মদানে বলীয়ান হতে সদা প্রস্তুত আমরা।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছে।

✍ পাকিস্তানি সামন্তবাদী অপশক্তি বাংলার ওপর কেবল সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক আগ্রাসনই চলায় নি, তারা শোষণ-নির্যাতনের মাধ্যমে জাতিকে কোণঠাসা করে রাখতে চেয়েছিল। আলোচ্য উদ্দীপক ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় এ দিকটি লক্ষণীয়।

✍ উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, বাংলার স্বর্ণশ্যাম বুকে সান্ত্রী কাপুরুষ পাকিস্তানিদের সদর্প বিচরণ। অস্ত্র হাতে তারা নিধন করতে উদ্যত হয় বাঙালি জাতিকে। উদ্দীপকে এদের ‘বুনো দল’ বলে অভিহিত করে কবি এদের থামাতে বলেছেন। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় কবি সারাবাংলাকে ঘাতকের অশুভ আস্তানায় পরিণত হতে দেখেছেন। মানবিক বাগান, কমলবন হয়ে যাচ্ছে তছনছ। অমানবিকতার করাল থাবার নিচে চাপা পড়েছিল বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে বাঙালির ভাষাগত পার্থক্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল আদর্শগত পার্থক্য। তাই বাঙালি নিধনে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত ছিল না। পাকিস্তানিদের এ বর্বরতার চিত্র প্রাধান্য পাওয়ার মধ্য দিয়ে উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ “কোটি মানুষের সমবায়ী সভ্যতার ভাষা এরা রদ করবে কীভাবে”- উক্তিটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার নিরিখে যথার্থ।

✍ কোটি কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। মাতৃভাষা বাংলা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলা ভাষাই তাদের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। অথচ এই ভাষাকেই পাকিস্তানিরা রদ করতে উদ্যত হয়।

✍ উদ্দীপকে পাক-হানাদারদের বর্বরতা ও নৃশংসতার দৃশ্যই সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। যেখানে বাংলার স্বর্ণশ্যাম বুকে সান্ত্রী কাপুরুষরা সদর্পে বিচরণরত। চেতনাকে ধ্বংস করতে না পেরে তারা অস্ত্র দিয়ে বাঙালিকে কাবু করতে চায়। এমনকি তারা বাঙালির সংস্কৃতিকে পর্যন্ত ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘বুনোদল’ উলে­খ করে এদের প্রতিরোধের আহবান জানিয়েছেন। ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় হানাদারদের এ ধ্বংস চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতীকাশ্রয়ে। কবির বর্ণনায় মানবিক বাগান আর কমলবন তছনছ হয়ে যাচ্ছে পাকবাহিনীর বর্বরতায়। বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তারা বাঙালিকে দমনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু আত্মসচেতন বাঙালি তা মেনে নেয়নি। বরং তারা দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বীর বাঙালি পাকবাহিনীর হীন চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল প্রতিবার।

✍ উদ্দীপকেও হানাদারদের এ হীন মনোবৃত্তি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথাযথ ও যুক্তিযুক্ত।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো, তবে কী থাকে আমার?

উনিশ শো বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি

বুকে নিয়ে আছে সগৌরবে মহীয়সী।

সে ফুলে একটি পাপড়িও ছিন্ন হলে আমার সত্তার দিকে

কতো নোংরা হাতের হিংস্রতা ধেয়ে আসে।

ক. কার হাত থেকে অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে পড়ে?

খ. “সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করে না” মন্তব্যটির পক্ষে তোমার যুক্তি দাও।

৬নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ সালামের হাত থেকে অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে পড়ে।

খ. অনুধাবন

✍ “সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা” বলতে পাকিস্তানি বাহিনীর অশুভ পদচারণাকে বোঝানো হয়েছে।

✍ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চালায়। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

গ. প্রয়োগ

✍ উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার চেতনা ও ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটির প্রতিফলন লক্ষণীয়।

✍ ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় গণআন্দোলনের বিষয়টি স্থান পেয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবমাননা হলে বাঙালির অস্তিত্বের সংকট তৈরি হয়। কারণ বাঙালির ভাষা, আত্মমর্যাদা ও অস্তিত্ব অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। বাঙালির ভাষা ও অস্তিত্ব রক্ষার এই সংগ্রামী প্রেক্ষাপটই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। যা আলোচ্য কবিতারও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

✍ উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে যে মর্মন্তিক ঘটনাটি ঘটেছিল; পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নির্মমতা বিশ্ব অবলোকন করেছিল, তার স্মৃতিচারণ ঘটেছে। শহিদের রক্তদানের স্মৃতিকে বলা হয়েছে ‘দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি’। যা বুকে ধারণ করে আছে বাংলা ভাষা। অর্থাৎ, বাংলা ভাষা আমরা পেয়েছি রক্তের দামে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করে না মন্তব্যটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।

✍ মাতৃভাষার প্রতি সকল মানুষের থাকে সহজাত ভালোবাসা। বাঙালিও তার ভাষা-সংস্কৃতিকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে, যার প্রমাণ ভাষা আন্দোলন। এরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকে। কিন্তু ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় এর ভিন্ন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

✍ ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় উঠে এসেছে সংগ্রামী চেতনা ও স্বদেশপ্রেম। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতিবাদী মনোভাব ’৫২ -এর ভাষা আন্দোলনের যে তীব্রতা ছিল সে কথাই ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতায় প্রতিভাত। যে কারণে সালাম ও বরকতের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। অবিনাশী বর্ণমালা ঝরে পড়ার কথাও বলা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

সাজিদুর রহমান একজন জনপ্রিয় গল্প লেখক। তাঁর গল্পের জনপ্রিয়তার কারণ সম্পর্কে একদিন বন্ধু সাব্বির কিছু জানতে চান। তখন সাজিদুর রহমান জানান, তিনি গল্পের চরিত্র ও বিষয়গুলো আমাদের সমাজের চেনাজানা পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করেন এবং তার সাথে নিজের চৈতন্যজাত উপলব্ধির সংযোগ সাধন করেন। ফলে ঐ গল্প পাঠকের নিজের বা তারই আশপাশের পরিচিত মানুষের জীবনকাহিনি বলেই মনে হয়। এতেই তাঁর গল্পগুলো পাঠকের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

ক. কবির হৃদয়ে কে নিত্য আসা-যাওয়া করে?

গ. “ফুল নয়, ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ”-ব্যাখ্যা কর।

গ. ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবির কোন বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের সাজিদুর রহমানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে? বর্ণনা কর।

ঘ. “উদ্দীপকের সাজিদুর রহমান আর ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবি একই বোধে উজ্জীবিত।” মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৭নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

✍ কবি হৃদয়ে চর্যাপদের হরিণী নিত্য আসা-যাওয়া করে।

খ. অনুধাবন

✍ “ফুল নয় ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ”- লাইনটিতে কবি কৃষ্ণচূড়ার ডালে থরে থরে ফুটে থাকা লাল ফুলকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তের সাথে তুলনা করেছেন।

✍ ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতা কবির হৃদয়ে একুশের চেতনার প্রতীক। প্রতি একুশেই কৃষ্ণচূড়ার ডাল রক্তের মতো লাল হয়ে ওঠে ফুলে ফুলে। কবির মনে হয় ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। মূলত কবির স্মৃতিতে হয়ে আছে ভাষাশহিদদের স্মৃতি।

গ. প্রয়োগ

✍ ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবির উপলব্ধিকে বাস্তবতার সাথে মেলানোর যে বৈশিষ্ট্য, তা উদ্দীপকের সাজিদুর রহমানের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

✍ কবিরা অনেক বেশি সময় ও সমাজ সচেতন হন। তবে লেখার ক্ষেত্রে তাঁরা শুধু সময়দ্রষ্টা কিংবা সমাজদ্রষ্টা নন। কেননা জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সব সামাজিক সমস্যা একনিষ্ঠ বিশ্বস্ততার সাথে লেখার মধ্যে প্রতিফলিত করাই তাঁদের মহান ব্রত।

✍ ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় দেখা যায়, নব্যকালের এক কবির হৃদয়ে চর্যাপদের হরিণী নিত্য আসা-যাওয়া করে। তাঁর মননে নতুন বিন্যাস রাবীন্দ্রিক ধ্যান জাগে। এ চর্যাপদের প্রভাব আর রবীন্দ্রনাথের ধ্যান তাঁর মধ্যে যে উপলব্ধির সৃষ্টি করে তাই তিনি বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেন। অন্যদিকে উদ্দীপকের সাজিদুর রহমানও তাঁর গল্পকে বাস্তবসম্মত করেই রচনা করেন। তিনি তাঁর গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেন বাস্তব সমাজ থেকেই। আর ঐ গল্পের বাস্তব উপাদানের সাথে সূক্ষভাবে নিজের উপলব্ধির সংযোগ সাধন করেন। ফলে গল্পগুলো হয়ে ওঠে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

✍ “উদ্দীপকের সাজিদুর রহমান আর ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবি একই বোধে উজ্জীবিত।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ প্রত্যেক জাতির জাতীয় গৌরবগাথা কবি-লেখকের কাছ থেকেই উদ্ভূত হয়ে থাকে। তাঁদের লেখায় কলমের আঁচড়ে সমকালীন মানুষের জীবনযাত্রা, জীবনযাপনের নানাবিধ অনুষঙ্গ, লোকাচার, ধর্মীয় বিশ্বাসবোধ, জাতীয় জীবনের নানাবিধ গৌরবগাথা জীবন্ত হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে যাঁর লেখা যত বেশি বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী, তাঁর লেখাকে মানুষ আপন মনে করে নেয় তত বেশি। আর এভাবে উপলব্ধিকে মানুষের মনে সঞ্চারিত করার প্রশ্নে অধিকাংশ কবি-লেখকই অভিন্ন।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, সাজিদুর রহমান একজন সমাজসচেতন গল্প লেখক। তিনি গল্পকে বরাবরই যুগোপযোগী করে রচনার পক্ষপাতী। কেননা তিনি মনে করেন, উপলব্ধিকে পাঠকের মনে সঞ্চারিত করার প্রধান উপায় হচ্ছে বাস্তবসম্মত রচনা। এজন্যই তিনি সমাজ থেকে গল্পের বাস্তব উপাদান সংগ্রহ করে তার মধ্যে স্বীয় উপলব্ধির মিশ্রণ ঘটান। উপলব্ধিকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নেয়ার এ কাব্যটিই করতে চান ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবি। যিনি চর্যাপদের হরিণীকে হৃদয়ে ধারণ করেছেন। কালের প্রভাবে তাঁর মননে রাবীন্দ্রিক ধ্যান নতুন বিন্যাস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। নতুন এ ধ্যান-ধারণাকে এবার বাস্তবতার তুমুল রোদ্দুরের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন।

✍ উদ্দীপকের সাজিদুর রহমান গল্পের উপাদানের ভেতরে স্বীয় উপলব্ধিকে সঞ্চারিত করতে চান। আর ‘ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯’ কবিতার কবিও উপলব্ধিকে কঠোর বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নিতে চান। এ বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

Leave a Comment