HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download ~ Exam Cares

 এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন

দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

অধ্যায়-৬

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download

Srijonshil

Question and Answer

১. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘X’ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১টি। ‘X’ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, স্বাস্থ্যক্লিনিক ও ঘরবাড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়ে থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকায় ‘X’ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সাধিত হয়।

ক. পৌরসভার প্রধানকে কী বলা হয়?

খ. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?

গ. উদ্দীপকে ‘X’ কোন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান? উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি আলোচনা করো।

ঘ. ‘X’ প্রতিষ্ঠানকে অধিক কার্যকর করার ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. পৌরসভার প্রধানকে মেয়র বলা হয়।

খ. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক জনগণের স্বশাসনকে বোঝায়।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হয় না। এর প্রতিনিধিগণ এলাকার জনসাধারণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত অথবা সরকার কর্তৃক মনোনীত হন। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এরা নিজ নিজ এলাকার জনগণের নিকট দায়ী থাকেন। বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ প্রভৃতি।

গ. উদ্দীপকের ‘X’ হলো সিটি কর্পোরেশন নামক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন অন্যতম। বিভিন্ন স্থানের বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহৎ নগরীর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়েছে। এটি মূলত একটি নগরভিত্তিক স্থানীয় সংস্থা। উদ্দীপকে এ প্রতিষ্ঠানটিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

উদ্দীপকের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘x’-এর সংখ্যা হলো ১১। এ প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যক্লিনিক ও ঘরবাড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়ে থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকায় এ সংস্থার কার্যক্রম সাধিত হয়। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষণীয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। যথা: ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুর। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ অর্থাৎ মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলররা সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলি সম্পাদন করেন। এসব কাজে জনগণও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। মহানগরীর উন্নয়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি কর্পোরেশন বহুবিধ কাজ করে থাকে। সন্ত্রাস দমন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের জন্য এ প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মহানগরীর জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে সিটি কর্পোরেশন বহুমুখী দায়িত্ব পালন করে। যেমন- হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ ও নির্মাণের অনুমতি প্রদান, শৌচাগার নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ইত্যাদি। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছেত রাস্তাঘাট নির্মাণ, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, বিশ্রামাগার নির্মাণ, মোটরগাড়ি ও ট্রাক ছাড়া অন্য সকল প্রকার যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান ও চলাচল ইত্যাদি। এ সংস্থাটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, সাহায্য ও পুনর্বাসনেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এছাড়াও জনকল্যাণ এবং মহানগরের উন্নয়নে সংস্থাটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

ঘ. ‘X’ প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশনকে অধিক কার্যকর করার ক্ষেত্রে জনগণ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

সিটি কর্পোরেশন মহানগরের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। এর মেয়র ও কাউন্সিলরদের জনগণ সরাসরি নির্বাচন করতে পারে। এর ফলে সিটি কর্পোরেশনে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারাও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

সিটি কর্পোরেশনের সীমিত জনবলের পক্ষে মহানগরের মতো বিশাল এলাকার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে জনগণ নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ও আবর্জনা ফেলে ও নিজ দায়িত্বে নিজেদের বাড়ির পাশ পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করে। মহানগরের জনগণের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের জন্য সিটি কর্পোরেশন গভীর ও অগভীর নলকূপ খনন করে। জনগণ পানির অপচয় রোধ করে সকলের জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে। জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করে। এসব কাজে এলাকার জনগণ সম্পৃক্ত হয়ে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করে। ভূমি অধিগ্রহণ, বাড়িঘর স্থানান্তর ইত্যাদি কাজেও জনগণ কর্পোরেশনকে সাহায্য করে। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে জনগণ সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন সংগ্রহ করে। রাস্তাঘাটে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার ব্যাপারেও এ প্রতিষ্ঠানটিকে জনগণ সহযোগিতা করে।

পরিশেষে বলা যায়, মহানগরের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সিটি কর্পোরেশন যেসব কাজ করে তা মূলত জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। এ কারণে জনগণও এসব কাজে সহযোগিতা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

২. ছোট একটি শহরের জনপ্রতিনিধি জনাব কামরুল ইসলাম তার শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। অন্যান্য সদস্যের সহায়তায় তিনি এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করেন। তিনি ও তার ৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত সালিশি আদালত এলাকার ছোটখাটো বিবাদ ও কলহের মীমাংসা করতে পারেন।

ক. স্থানীয় সরকার কাকে বলে?

খ. সর্বজনীন ভোটাধিকার বলতে কী বোঝায়?

গ. জনাব কামরুল ইসলাম যে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সরকারের প্রধান তার গঠন উল্লেখ করো।

ঘ. উক্ত স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সকল কার্যক্রম উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয় নাইত মন্তব্য করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. একটি দেশের সরকারের নীতিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে স্থানীয় পর্যায়ে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী কর্তৃক এলাকাভিত্তিক শাসন ব্যবস্থাকে স্থানীয় সরকার বলে।

খ. যখন ধর্ম-বর্ণ, ধনী-নির্ধন, নারী-পুরুষ, গুণ বা উপযুক্ততা নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভোটাধিকার দেওয়া হয়, তখন তাকে সর্বজনীন ভোটাধিকার বলা হয়।

সর্বজনীন ভোটাধিকার আধুনিক গণতন্ত্রের আদর্শ। বাংলাদেশে ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকারের নীতি মেনে চলা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২ নং অনুচ্ছেদে প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের কথা বলা হয়েছে।

গ. জনাব কামরুল ইসলাম পৌরসভা নামক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের প্রধান। কেননা উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব কামরুল একটি শহরের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেন। যে কাজগুলো মূলত পৌরসভার কাজ। এছাড়া তিনি ও তার ৪ জন সদস্য সালিশি আদালত গঠন করেন। এ বিষয়টিও পৌরসভাকেই নির্দেশ করে। নিচে পৌরসভার গঠন উল্লেখ করা হলো-

বাংলাদেশের শহর এলাকার স্থানীয় সরকার হিসেবে পৌরসভা গঠিত হয়। প্রতিটি পৌরসভাকে কতকগুলো ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারিত হয় শহরের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ পৌরসভায় ১৮টি ওয়ার্ড থাকে। সমগ্র পৌর এলাকা থেকে একজন মেয়র, প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে একজন করে কাউন্সিলর ও প্রতি তিনটি ওয়ার্ড থেকে একজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। এভাবে মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভার কার্যকাল পাঁচ বছর। পৌরসভার কাজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক পৌরসভায় একজন নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনায় পৌরসভা তথা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সকল কার্যক্রম প্রতিফলিত হয় নি বলে আমি মনে করি।

উদ্দীপকের বর্ণনা মতে, পৌরসভার জনপ্রতিনিধি জনাব কামরুল ইসলাম শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। অন্যান্য সদস্যের সহায়তায় তিনি এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করেন। তিনি ও তার ৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত সালিশি আদালত এলাকার ছোটখাটো বিবাদ ও কলহের মীমাংসা করতে পারেন। এছাড়াও পৌরসভার আরো নানাবিধ কার্যাবলি রয়েছে। যেমন- পৌর এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, এগুলোকে অর্থ সাহায্য প্রদান, ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান, যাদুঘর স্থাপন, পার্ক, উদ্যান, মিলনায়তন স্থাপন, বিভিন্ন স্থানে রেডিও-টেলিভিশন সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ, অনাথ ও দুস্থদের জন্য কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন, ভিক্ষাবৃত্তি, জুয়াখেলা ও মদ্যপান বন্ধের ব্যবস্থা করা, মৃতদেহের সৎকার, পৌর এলাকার জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য নৈশ প্রহরী নিয়োগ, অপরাধ বিপজ্জনক খেলা ও পেশা নিয়ন্ত্রণ, গোরস্থান, শ্মশান নির্মাণ, বন্যা ও দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

সুতরাং এটা নি:সন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের বর্ণনায় পৌরসভা নামক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সকল কার্যক্রম প্রতিফলিত হয় নি।

৩. মরিয়ম বেগম হারবাং গ্রামে বাস করে। সে গ্রামের কয়েকজন দুঃস্থ মহিলাকে নিয়ে একটি কুটির শিল্প গড়ে তোলে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তারা অর্থ সংকটে পড়ে। তাদের কিছু মালামালও চুরি হয়ে যায়। তখন তারা বেশ হতাশ হয়ে পড়ে। ঐ সময় তাদের এলাকার একটি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাদের বেশ সহযোগিতা করে। ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেক বড় হয়েছে।

ক. বর্তমানে বাংলাদেশে সিটি কর্পোরেশনের সংখ্যা কয়টি? 

খ. পৌরসভার গঠন বর্ণনা করো।

গ. উদ্দীপকে যে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কথা বলা হয়েছে তার কার্যাবলি সংক্ষেপে লিখ।

ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সংস্থা গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে? ব্যাখ্যা করো।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. বর্তমানে বাংলাদেশে সিটি কর্পোরেশনের সংখ্যা ১১টি।

খ. শহরকেন্দ্রিক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কাঠামোর মৌলিক একক হচ্ছে পৌরসভা।

পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারিত হয় শহরের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ পৌরসভায় সাধারণত ১৮টি ওয়ার্ড থাকে। সমগ্র পৌর এলাকা থেকে একজন মেয়র, প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে একজন সদস্য এবং প্রতি তিনটি ওয়ার্ড থেকে একজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। পৌরসভার কাজ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একজন নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন।

গ. উদ্দীপকে যে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কথা বলা হয়েছে সেটি হলো উপজেলা পরিষদ।

নিম্নে উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি।

২. পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং কার্যসমূহের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করা।

৩. ই-গভর্ন্যান্স চালু ও উৎসাহিতকরণ।

৪. উপজেলার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা।

৫. সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য ব্যবহার ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।

৬. জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিতকরণ।

৭. উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রসারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং সহায়তা প্রদান করা।

৮. ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ও বিকাশের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা।

৯. সমবায় সমিতি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাজে সহায়তা প্রদান তাদের কাজের সমন্বয় সাধন করা।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উপজেলা পরিষদ গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। উপজেলা পরিষদ স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, প্রশাসন ও সংস্থাপন সংক্রান্ত কাজ, জনশৃঙ্খলা রক্ষামূলক কাজ, জনকল্যাণ ও সেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। উপজেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং উক্ত দফতরের কর্মকান্ডর তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করে। ইউনিয়ন ও পৌরসভার কর্মকান্ড সহায়তা করে। সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, চোরাচালান, মাদকদ্রব্যজনিত অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে। স্যানিটেশন, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানীয় ব্যবস্থা করে। উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রসারের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদান করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে। বেসরকারিভাবে মহিলা, শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে সহায়তা প্রদান করে। কৃষি উন্নয়নে ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের সমন্বয়ও করে থাকে উপজেলা পরিষদ।

সুতরাং বলা যায়, গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উপজেলা পরিষদ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

৪. আবীর গ্রামে বাস করে। সে এবার প্রথম একটি স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। বিধি অনুযায়ী সে এই সংস্থার নির্বাচনে মোট তিন জনকে ভোট দেবার সুযোগ পায়। সংস্থাটিতে মোট ১৩ জন নির্বাচিত হন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। আবীর মনে করে, উত্ত সংস্থাটি স্থানীয় জনমতের প্রাধান্য দিয়ে এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে এবং স্থানীয় জনগণকে সকল কাজে সম্পৃক্ত করবে।

ক. মুসলিম লীগ কবে গঠিত হয়?

খ. দ্বৈত শাসন বলতে কী বোঝ?

গ. স্থানীয় জনগণের উন্নতিতে এই সংস্থাটি কী কী ভূমিকা রাখছে? আলোচনা করো।

ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে জনগণের অংশগ্রহণ যত বেশি হবে গণতন্ত্রের ভীতও শক্তিশালী হবে।’ — তুমি কি একমত যুক্তি দেখাও।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

খ. ১৭৬৫ সালে বাংলা শাসনের জন্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে রবার্ট ক্লাইভ দুই জনের যে অভিনব শাসন পদ্ধতির প্রবর্তন করেন তাকে দ্বৈতশাসন বলে।

১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি (রাজস্ব) আদায়ের ক্ষমতা লাভের পর লর্ড ক্লাইড বাংলায় দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসনের অর্থ হলো দু’জনের শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলার নবাবের হাতে। অন্যদিকে, বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার, জমির বিবাদ সম্পর্কিত বিচার কোম্পানির ওপর ন্যস্ত হয়। অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা। অন্যদিকে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।

গ. উদ্দীপকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি মূল্যায়ন করা হলো-

জনকল্যাণমূলক কাজ: জনকল্যাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তাঘাট নির্মাণ ও তাদের তত্ত্বাবধান, খেলাধুলার মাঠ নির্মাণ ও মেরামত, রাস্তা ঘাটে আলোর ব্যবস্থা, গোরস্থান, শ্মশান, বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য কূপ, নলকূপ স্থাপন করে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ।

শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত কাজ: ইউনিয়নের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগ এবং গ্রামীণ পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন ও পরিচালনা করে থাকে।

বিচার -সংক্রান্ত কাজ: ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা ও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সালিশি আদালত হিসেবে কাজ করে।

রাজস্ব-সংক্রান্ত কাজ: ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় কর ধার্য ও আদায় এবং সরকারকে বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব সংগ্রহে সাহায্য করে থাকে।

বিনোদনমূলক কাজ: ইউনিয়ন পরিষদ ইউনিয়নে মেলা ও প্রদর্শনী আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠান, খেলাধুলার সরঞ্জাম ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে।

এ ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত, শিক্ষা সংক্রান্ত, সংবাদ সরবরাহ ও প্রচার, নিবন্ধীকরণ এবং ই-গভর্নেন্স চালু ও উৎসাহিতকরণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে।

উক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, স্থানীয় উন্নয়নে বিশেষ করে পল্লি এলাকার উনণয়নে ইউনিয়ন পরিষদ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের অংশগ্রহণ যত বৃদ্ধি পাবে গণতন্ত্রের ভিত ততো শক্তিশালী হবে- এ কথার সাথে আমি একমত।

বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউনিয়ন পরিষদ। গ্রামীণ বা পল্লির জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্ব-শাসন প্রতিষ্ঠা, নেতৃতেবর গুণাবলির বিকাশ, উনণয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা, জবাবদিহিমূলক স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠা, শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রতিষ্ঠানে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের চর্চা হয় এবং গণতন্ত্রের ভিত আরো শক্তিশালী হয়। কেননা, গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। আর ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকান্ড চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদেরকে সরাসরি জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ অনুসারে, প্রত্যেক ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডসভা গঠিত হয়। এর বার্ষিক সভায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য বিগত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং আর্থিক সংশ্লেষসহ ওয়ার্ডের চলমান সকল উন্নয়ন কার্যক্রম উপস্থাপন করে। ওয়ার্ডসভার মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার বিধান রয়েছে। এর ফলে ওয়ার্ড পর্যায়ে জনগণের সম্পৃক্ততা ঘটে। ওয়ার্ড পর্যায়েই প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত এবং বাস্তবায়নযোগ্য স্কিম এবং উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রাধিকার নিরূপণ করার ফলে স্থানীয় জনগণ অধিকতর সচেতন হয়ে ওঠে। তাছাড়া বয়স্কভাতা, ভর্তুকিসহ বিভিন্ন ভাতা তাদেরকে কীভাবে দেওয়া হবে তা ওয়ার্ডসভাতে বসে ঠিক করা হয়। এছাড়াও যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, এসিড নিক্ষেপ, মাদকাসক্তি প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে ওয়ার্ডসভা আন্দোলন গড়ে তোলে এবং পরিষদের বিভিন্ন কর্মকান্ড জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হয়।

উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কাজে গতি আসবে, গণতন্ত্র

শক্তিশালী হবে। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হবে।

৫. চুন্নু মিয়া গ্রামভিত্তিক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনিসহ আরো কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সমন্বয় ঐ প্রতিষ্ঠান গঠিত দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের জন্য একজন সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারিও নিযুক্ত। রফিক সাহেব অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তার নির্বাচনি এলাকার সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি কিছু সীমাবদ্ধতা ও অনুভব করেন।

ক. দুর্নীতি কাকে বলে?

খ. খাদ্যে ভেজাল রোধ করা প্রয়োজন কেন?

গ. জনাব চুন্নু মিয়া কোন পদে আসীন? তার প্রতিষ্ঠানের গঠন বর্ণনা কর।

ঘ. উদ্দীপকের আলোকে চুন্নু মিয়ার প্রতিষ্ঠান কী কাজ করে? প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতা কী? বিশ্লেষণ কর।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. নীতি বা আইন বিরুদ্ধ কাজ করাই দুর্নীতি।

খ. আমাদের দেশের নাগরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো খাদ্যে ভেজাল।

খাদ্যে ভেজালের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ভয়ঙ্কর প্রভাব রয়েছে। এর ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। খাদ্যে ভেজালের কারণে আমরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। যেমন- লিভার ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, ব্লাড ক্যান্সার, কিডনির জটিলতা, হৃদরোগ, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি। এছাড়াও ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার ইত্যাদি এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব থেকে বাঁচার জন্য খাদ্যে ভেজাল রোধ করা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের চুন্নু মিয়া গ্রামীণ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান।

ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের পল্লি অঞ্চলের সর্বনিমণ প্রশাসনিক ইউনিট। প্রাথমিক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা নিরাপত্তামূলক কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে এটিই স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক ভিত্তিরূপে গড়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪,৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদ আছে।

ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, নয়জন নির্বাচিত সাধারণ সদস্য এবং তিনজন সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত মহিলা সদস্য নিয়ে। নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটি ইউনিয়নকে নয়টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে একজন পুরুষ সদস্য, প্রতি তিন ওয়ার্ডে একজন করে মোট তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য এবং সমগ্র ইউনিয়ন থেকে একজন চেয়ারম্যান জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয় মোট ১৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে। পরিষদের সার্বক্ষণিক দাপ্তরিক কাজ করেন সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ও বেতনভুক্ত একজন সেক্রেটারি। উদ্দীপকের চুন্নু মিয়া একটি সংস্থার নির্বাচিত প্রধান। তার সংস্থায় তিনিসহ মোট ১৩ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন। তাদের কাজে সাহায্য করার জন্য সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সেক্রেটারি কর্মরত আছেন। চুন্নু মিয়ার এ সংস্থাটির সাথে ইউনিয়ন পরিষদের গঠনের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের চুন্নু মিয়ার প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, ইউনিয়ন পরিষদ জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। তবে এসব কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়।

বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সর্বনিম্ন স্তর হলো ইউনিয়ন পরিষদ। জনবহুল গ্রামাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ে লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ প্রধানত দুই ধরনের কাজ করে। যেমন: মৌলিক কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ।

ইউনিয়ন পরিষদের মৌলিক কাজের মধ্যে রয়েছে গ্রামাঞ্চলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এ উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরির কার্যকাল ও শর্তাবলি নির্ধারণ করে। এ সংস্থাটি ইউনিয়নে কর্মরত রাজস্ব কর্মকর্তাদের কর আদায় ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করে। সরকারের নীতি বা কর্মসূচি জনগণকে জানানোও ইউনিয়ন পরিষদের কাজ। ইউনিয়নে কোনো অপরাধ ঘটলে এ প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে জানায়। অপরাধ নিরোধ সংক্রান্ত ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করে। ছোটখাটো দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারকাজও ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদ জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণার্থে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও করে। যেমন: রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, পার্ক, পুকুর, কবরস্থান, ইত্যাদি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। এছাড়া জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্যোগের সময় সেবামূলক কাজ এবং নিরাপত্তামূলক কাজ করাও ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত। আবার বৃক্ষরোপণ, কৃষি-শিল্পের উন্নয়ন সাধন, বিনোদন ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের কাজও ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে।

জনগণের কল্যাণে কাজ করা হলেও কখনো কখনো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি কিছু সীমাবদ্ধতার শিকার হয়। যেমন- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনগণ যদি অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের হয় তাহলে চেয়ারম্যান যতোই আন্তরিক হোক না কেন, তার পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে না। ইউনিয়ন পরিষদের আরেকটি বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা হলো- নিজস্ব পর্যাপ্ত জনবল না থাকা। এছাড়া পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সচিব ও চৌকিদারদের বেতন বা সম্মানী নামমাত্র হওয়ায় তাদের মধ্যে সার্বক্ষণিক কাজ করার আগ্রহ খুবই কম। তাছাড়া করের পরিমাণ কম হওয়ায় পরিষদের নিজস্ব আয়ও তেমন নেই। উপর্যুক্ত আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করলেও তার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

৬. রুমি গ্রামে বাস করে। সে কয়েক বছর আগে একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছে। এই পরিষদটি হয়েছে একজন নির্বাচিত প্রধান, নয়জন নির্বাচিত সদস্য এবং তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গণতন্ত্রের চর্চা, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পাদন করে থাকে।

ক. বাংলাদেশে কয়টি সিটি কর্পোরেশন আছে?

খ. স্থানীয় সরকার/শাসন বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় জনগণের উন্নয়নে যে ধরনের কাজ করে তা উদাহরণসহ বুঝিয়ে লিখ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান কীভাবে গণতন্ত্র চর্চা, স্বশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে? বিশ্লেষণ কর।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশে ১১টি সিটি কর্পোরেশন আছে।

খ. স্থানীয় সরকার বলতে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে স্থানীয় পর্যায়ে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী কর্তৃক এলাকাভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।

স্থানীয় সরকার হলো সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ। সরকার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ ব্যবস্থায় স্থানীয় শাসন কর্তৃপক্ষের কোনো স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও নীতিনির্ধারণি ক্ষমতা থাকে না। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন হলো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটি বলতে ইউনিয়ন পরিষদকে বোঝানো হয়েছে যার মূল লক্ষ্য গ্রামীণ জনগণের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা।

গ্রাম কেন্দ্রিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের প্রশাসনিক পর্যায়ের সর্ব নিম্নে অবস্থিত। এই পরিষদটি গঠিত হয় একজন নির্বাচিত প্রধান, নয়জন নির্বাচিত সদস্য এবং তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য নিয়ে। এটি গ্রামের স্থানীয় জনগণের সার্বিক মঙ্গল ও উন্নয়ন করার জন্য বিভিন্ন কার্য পরিচালনা করে থাকে।

ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় জনগণের উন্নয়নে যে সকল কাজ পরিচালনা করে তাদের মধ্যে রয়েছে:-

১. গ্রাম বা পল্লির সেŠনদর্য বৃদ্ধি

২. গ্রামীণ বা পল্লি এলাকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা

৩. স্ব-শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা

৪. স্থানীয় জনগণের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটানো

৫. উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা

৬. জবাবদিহিমূলক স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা

৭. গণ সচেতনার বিকাশ ঘটানো

৮. শাসন ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ বা পল্লি জনগণের সার্বিক উনণয়নে বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সর্বনিম্নে অবস্থান করে। এটি গণতন্ত্র চর্চা, স্বশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ্রামীণ জনগনের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নয়জন নির্বাচিত সদস্য এবং তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য নিয়ে ৫ বছরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গণতন্ত্রের চর্চা, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- সম্পাদন করে থাকে।

ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ বা পল্লি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় জনগণের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটানো, উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, জবাবদিহিমূলক স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা, গণ সচেতনতার বিকাশ ঘটানোসহ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে থাকে।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গণতন্ত্র জনগণের শাসন। জনপ্রতিনিধিরাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে। গ্রামীণ ও পল্লির এলাকাতে দেশের সিংহভাগ মানুষ বসবাস করে। ইউনিয়ন পরিষদ তার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জনকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর কারণে দেশে গণতন্ত্র চর্চা, স্বশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পদ সুপ্রশস্ত হয়।

Leave a Comment