↬ ছাত্রজীবন
↬ ছাত্রজীবনে দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা : বিদ্যালয়–মহাবিদ্যালয়–বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কালকেই সাধারণত ছাত্রজীবন বলা হয়। জীবনের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এ সময়টাই সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ভিত্তি সুদৃঢ় না হলে যেমন ইমারত ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তেমনি ছাত্রজীবন বৃথায় নষ্ট করলে ভবিষ্যৎ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ছাত্রসমাজ দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক। তাদের মধ্যে নিহিত আছে শক্তির প্রাচুর্য, সম্ভাবনার সীমাহীন রাজ্য। তারাই জীর্ণতার অন্ধকারে ছিন্নভিন্ন করে আনে আলোকোজ্জ্বল নতুন প্রভাত। তারা তাদের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করে কবির কণ্ঠে বলে :
ছাত্রজীবনের স্বরূপ : ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। আজকের ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে। তই জীবনগঠনে ছাত্রজীবন অত্যন্ত মূল্যবান। জ্ঞান–বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনেই। মানবজীবনের সার্থক বিকাশের জন্যে মনুষ্যত্বের যে সাধনা তা ছাত্রজীবনে রূপ লাভ করে। তাদের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হয়। বিকশিত মেধা জীবনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। নিরলস সাধনায় জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করে ছাত্রজীবনেই। তাই ছাত্রজীবন প্রস্তুতির জীবন। এরই ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা–ব্যর্থতা। নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতি–প্রকৃতি। ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের পল্লবিত সৌন্দর্যের অস্ফুট পটভূমি।
ছাত্রদের কর্তব্য : ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি–পর্ব। জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগই একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।
ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ
ছাত্রদের দায়িত্ব : ছাত্রসমাজের দায়িত্ব শুধু পড়াশোনার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ ও দেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার জন্য ছাত্রসমাজকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। জাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণব্রত তাদের গ্রহণ করতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাতিকে সমৃদ্ধ করা, জাতির সমস্যা সমাধান, বিশ্বের সমাজে জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি – এসব দায়িত্ব আজকের ছাত্রসমাজেরই। দেশের দুর্দিনে ছাত্রসমাজই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবে। মোটকথা, জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করবে ছাত্রসমাজ। জীবনের বৃহত্তর পরিসরে সে দায়িত্ব যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায় তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আত্মস্বার্থে নিমগ্ন মানুষ যথার্থ মানুষ নয় – পরের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত জীবন সার্থক জীবন – একথা বিবেচনায় রেখে ছাত্রজীবনের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে,
রাষ্ট্রের কল্যাণসাধন : ছাত্ররা তরুণ্যের দীপ্তিতে প্রোজ্জ্বল। দেশ ও জাতি গঠনের সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তারাই পারে সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির উন্নয়নে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ছাত্রসমাজের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ছাত্রসমাজকে রাষ্ট্রের ও কল্যাণমূলক কাজে অবশ্যই যোগদান করতে হবে। দেশ ও জাতির দুর্যোগে যথাশক্তি প্রয়োগ করে অশুভ শক্তির কবল থেকে রক্ষা করা ছাত্রদের নৈতিক দায়িত্ব।
ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা : ছাত্রজীবন নিয়মানুবর্তিতার একটি প্রকৃষ্ট প্রয়োগক্ষেত্র এবং উপযুক্ত সময়।
‘Work while you work, play while you play, and that is the way to be happy and gay.’
– এ নিয়ম ছাত্রদেররকে মেনে চলতে হবে। সুপরিকল্পিত এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মাবলির অধীনে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর ব্যক্তিজীবন ও ছাত্রজীবন পরিচালিত হলে সে জীবনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসতে বাধ্য। নিয়ম মেনে চলতে হবে – পাঠদানে, পাঠগ্রহণে, অধ্যয়নে, তথা শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক অবকাঠামোয়। যে ছাত্রের জীবন শৈশব থেকেই নিয়মের ছকে ঢেলে সাজিয়ে গড়া হয়, তার ভবিষ্যৎ তার অনুগামী না হয়ে পারে না। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়েই যদি নিয়মভঙ্গের মরণ–যজ্ঞ চলতে থাকে, তাহলে তার জন্যে ভবিষ্যতের গোটা সমাজকেই চরম মাশুল দিতে হয়। সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু ছাত্রসমাজের নিয়মভঙ্গের কারণে গোটা জাতির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রজীবন ভবিষ্যতেরই এক বিশেষ অধ্যায় মাত্র। পরবর্তী জীবনে ছাত্ররাই দায়িত্বশীল নাগরিক। তাই ছাত্রসমাজের কাছে আজও এই নিয়মানুশীলন এক মহৎ কর্তব্য।
উপসংহার : ছাত্র শব্দটির যে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে একটি সামগ্রিক মহৎ গুণাবলিই প্রতিফলিত হয় একজন ছাত্রের মধ্যে। সততা, আদর্শবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, উদ্যম, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ইত্যাদি বহুবিধ গুণাবলি একজন প্রকৃত ছাত্রের চরিত্রে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ – এ কথা মনে রেখে জীবন গঠনের কাজে তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে আত্মনিযোগ করতে হবে।
[ এই প্রবন্ধটি আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]
ভূমিকা:
‘আমরা রচি ভালবাসার
আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস
আকাশ ছায়াপথ।’
ছাত্র শব্দটির বিশ্লেষণে যে মূল্যায়ন করা হয়, তাতে একটি সামগ্রিক মহৎ গুণাবলিই প্রতিফলিত হয় একজন ছাত্রের মধ্যে। সততা, আদর্শবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, উদ্যম, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ইত্যাদি বহুবিধ গুণাবলি একজন প্রকৃত ছাত্রের চরিত্রে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। সুতরাং যে কোনো জাতির সেরা সম্পদ তরুণসমাজ তথা ছাত্রসমাজ। একটি জাতির সমৃদ্ধি, সম্মান, আর সফলতার ওপরই নির্ভর করবে জাতির ভবিষ্যৎ। এ প্রসঙ্গে M. K. বলেন-
“The students are the future leaders of the country who could fulfill country’s hopes being capable.”
ছাত্রদের ভূমিকার স্বরূপ: বিশ্বের যে-কোনো দেশে ছাত্রসমাজ তাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকেই নির্ধারণ করে তাদের দেশগঠনের কার্যক্রম। জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা দু’দিক থেকে বিবেচ্য। প্রথমত, ছাত্ররা নিজের জীবন গঠন তৎপরতা দেখিয়ে ভবিষ্যতের জন্যে যোগ্যতা অর্জন করে। দ্বিতীয়ত, তারা প্রত্যক্ষ ভাবে জাতিগঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।
তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এদেশের সমস্যাগুলোকে বিবেচনা করতে হবে। এবং যেসব সমস্যা সমাধানে ছাত্ররা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভূমিকা নিতে পারে, সেসব সমস্যা সমাধানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। যেমন: দেশপ্রেম, নিরক্ষরতার অভিশাপ, জনসংখ্যার আধিক্য, নৈতিক অবক্ষয় ও দুর্নীতি, শিাঙ্গনে সন্ত্রাস, কর্মসংস্থানের অভাব- বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বিষয়গুলো জাতির জন্যে এক নম্বর সমস্যা। আর এর প্রত্যেকটি বিষয়ই ছাত্ররা কম, বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
ছাত্রসমাজ ও সমাজসেবা: ছাত্ররা চিরকালই প্রভাতের সূর্যের মত চিরনবীন, বর্ষার নব কিশলয়ের মতই চিরসবুজ। নবীনত্বের শুচিতা তাদের দেহমনে। সেবাধর্মের মধ্যে যে মহত্ত্ব, যে উদারতা, যে আত্মত্যাগপরায়ণতা, ছাত্রসমাজই সর্বাগ্রে তার সন্ধান পায়। দিকে দিকে যখন আর্ত মানুষের ক্রন্দন ধ্বনি, যখন অসহায় বিপন্ন মানুষের দীর্ঘশ্বাস, মানুষ যখন প্রাকৃতিক দৈব-দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত, দুর্ভি-মহামারী কবলিত, তখন ছাত্রসমাজই আর্তের সেবায় এগিয়ে আসে। জনসেবার মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক সময় তারা বরণ করে মৃত্যুর মহিমা। মানুষের দুঃসহ লাঞ্ছনায় ছাত্রসমাজ কখনোই নীরব দর্শক মাত্র হয়ে থাকতে পারে না। সংসারের ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা কখনও তাদের আচ্ছন্ন করে না। শিক্ষার উদ্দেশ্যই তো মানবতাবোধের জাগরণ। পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে সেই মানবধর্ম। ছাত্রজীবনই হল সমাজসেবার উপযুক্ত পটভূমি। এই দেবীতলে তার ভবিষ্যৎ জীবনের পাঠ, মানবতার উদ্বোধন।
বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র: সমাজ, দেশ ও জাতির সমস্যাসমূহ দূর করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশ গঠনের সুমহান কার্যক্রম। এসব সমস্যা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন দেশপ্রেম।
দেশপ্রেম: একটি মানুষের চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল তার দেশপ্রেম। জ্ঞানার্জনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ছাত্রের মাঝে উপ্ত হয় সেবার আদর্শ, দেশপ্রেমের ক্ষুদ্র বীজ যা তার পরবর্তী কর্মবহুল-জীবনে ধারণ করে বিশাল মহীরূহের আকার। বাস্তবজ্ঞানের আলোকে দেশের কর্তব্যের আহ্বানে ছাত্রদলই পারে দেশপ্রেমের আদর্শে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে এবং স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বছরগুলোর ভাষা আন্দোলনে এ দেশের ছাত্রসমাজ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে মহান আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তা আজও ইতিহাস হয়ে আছে। দেশের ছাত্রসমাজই পারে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে এবং সেই সাথে দেশের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মহান ঐক্য ও সংহতির পক্ষপাতহীন মন্ত্রবাণী।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। ছাত্রসমাজ এ ক্ষেত্রে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সবচেয়ে বেশি। কেননা, ছাত্রদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উঁচু ধারণা পোষণ করে। ফলে ছাত্রদের যেকোন পরামর্শই তারা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে। সুতরাং, এ বিবেচনায় ছাত্রসমাজ নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ফলে জনসংখ্যার অভিশাপ থেকে দেশ হতে পারে সম্পূর্ণ মুক্ত।
নৈতিক অবয় রোধ ও রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা: ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বহু অন্যায় উচ্ছেদ করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীত ইতিহাসে এর একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। আর আজকের ছাত্রই আগামীদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার এক একটি অংশ। সুতরাং, ছাত্ররা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ সকল প্রকার নৈতিক অবয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং নিজেরাও সততার অনুশীলন করে, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হতে পারে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ।
সন্ত্রাস নিরসনে: শিাঙ্গনে সন্ত্রাস আজ দেশ গড়ার পথে এক মারাক্তক অন্তরায় হয়ে আছে। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ আজ বিনষ্ট হতে চলেছে। শিাঙ্গনে সন্ত্রাস নিরসনে সরকারি উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, ততোধিক প্রয়োজন ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
বেকারত্ব নিরসনে: কর্মসংস্থানের অভাবে বা বেকারত্ব বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির হথে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। ছাত্রসমাজ যদি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে, তা হলে বেকারত্বের অভিশাপ অনেকখানি দূর হবে।
কৃষি ক্ষেত্রে: উচ্চশিতি হলে কৃষিকাজ করা যাবে না, এমন প্রাচীন ধারণা ত্যাগ করা গেলে ছাত্রসমাজ উৎপাদন কর্মকান্ডে রাখতে পারে বিপুল অবদান। যেমন- কৃষি, মৎস্য ছাত্র, পশু, হাঁসমুরগির খামার, বাগান করা, গাছপালা রোপণ ইত্যাদি আর্থিক উন্নয়নমূলক কাজে তথা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ছাত্রসমাজই দেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম।
সাংস্কৃতিক অবদান: একটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় পরিচয় তুলে ধরতে ছাত্রসমাজ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা যথা : কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমে তারা বিশ্বের বুকে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারে।
অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়: অধ্যয়ন ও অধ্যবসায়ের মাধমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে একজন ছাত্র, দেশের প্রতি তার সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্যবোধের প্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমরা আমাদের দেশে ছাত্রশক্তির এই অফুরন্ত ভাণ্ডারকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে দেখছি। ছাত্রসমাজের অমিত বল ও শক্তির ধ্বংসাত্মক অপচয় হচ্ছে রাজনীতির জঘন্য নর্দমায়। চঞ্চলমতি এইসব ছাত্ররা ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের সার্থে এবং দেশের তিকারক কাজে। আজকের ছাত্ররাই কালকের দেশপরিচালক। দেশ পরিচালনার কঠোর কঠিন দায়িত্ব যেন তাদের ভূমিকা হয় সুস্থ, সুন্দর ও সফল- এ জন্যেই তাদেরকে আজ সর্বোত্তম প্রচেষ্টায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
উপসংহার: দারিদ্র্যেপীড়িত মাতৃভূমিকে গড়ে তোলার কাজে ছাত্রসমাজই রাখতে পারে সর্বোচ্চ অবদান। আমাদের মত অনুন্নত দেশে ছাত্রসমাজই শিক্ষার মাধ্যমে নবজীবনের চেতনার সঞ্চার করে। তাই দেশের কল্যাণসাধনে ছাত্রসমাজকে জাগ্রত করতে হবে। ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা এবং অজ্ঞতার বাধাকে অস্বীকার করে চিরন্তন কল্যাণবোধে উৎসারিত করতে হবে বিবেকশক্তিকে।