আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা তোমাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বক্তব্য – জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ (বক্তৃতা,বক্তব্য ২০২৩ PDF) সহ নিয়্র হাজির হয়েছি। আসা করি তোমাদের উপকারে আসবে।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বক্তব্য
বক্তব্যের বিষয়ঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ।
যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বক্তব্য প্রতিযোগিতায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত বিচারকমন্ডলী, সামনে উপবেষ্ট শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী ও প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী ভাই ও বোনেরা সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজকে আমার নির্ধারিত বিষয় ‘ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ।
প্রত্যেকটি জাতির উত্থানের পেছনে একজন মহানায়কের গল্প থাকে। যার হাত ধরে সে জাতি লাভ করে উত্থানের চরম শিখর। বাঙালি জাতির উত্থানের গল্পটা শুরু হয়েছিল যার হাত ধরে তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির প্রতি শোষন বঞ্চনার প্রতিবাদে নানা আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে লড়েছেন অধিকার আদায়ে। ১৯৭১ সালে তার বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার অকুন্ঠ বার্তা শুনে কোটি বাঙালি শুধু স্বপ্ন আর মনোবল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল প্রশিক্ষিত পাক সেনাদের বিপক্ষে। ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি ভূখণ্ড লাভ কিংবা পতাকা বদলের জন্য হয়নি। নয় মাসব্যাপী এই যুদ্ধ ছিল প্রকৃত অর্থেই মুক্তিযুদ্ধ। দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন সার্বিক মুক্তির আশায়। সেই মুক্তির মহানায়ক আমাদের জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালিকে জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। জন্মের পর থেকেই পাকিস্তান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে উর্দিপরা জেনারেলদের দ্বারা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বার বার প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। যে কারণে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা এদেশের মানুষের মনে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ‘৭০-এর নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হওয়ার পরও যখন পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি তখন এটা আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানে কখনও গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। হিন্দু- মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নির্বিশেষে সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই জাতীয়তাবাদকে অবলম্বন করে একজোট হয়েছে। এভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধ নতুন মাত্রায় বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছে। সমাজতন্ত্রের চেতনা এসেছে শোষণমুক্তির চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা থেকে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক প্রেরণা হিসেবে যে সব মূল্যবোধ ও স্বপ্ন যুদ্ধরত বাঙালিকে তাড়িত করেছে তার উজ্জীবনের কান্ডারী হিসেবে কাজ করেছে সাতই মার্চের সেই বজ্রকন্ঠ, তোমরা আমার ভাই, ‘তোমরা ব্যারাকে থাকো কেউ তোমাদের কিছু বলবেনা।’ এত সহজে সাবলীলভাবে সাত কোটি মানুষকে আপন করে নিয়েই মুক্তির সংগ্রামের পথে অগ্রযাত্র করেছিলেন জাতির জনক। আর এই ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাঁর কারাবরণ শুরু! বস্তুত জেল-জুলুম ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধুর জীবনে এক নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। জনগণের জন্য, দেশের জন্য তিনি তার ৫৫ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনকালের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গন্ধু পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। এক ভাষণেই তিনি সমস্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা এবং যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলার মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের সেই সশস্ত্র প্রত্যয়ই ঘোষিত হয়েছিল। এমনকি ‘আমি যদি না-ও থাকি’ কিংবা ‘আমি যদি হুকুম দেবার না পারি’ উচ্চারণের মধ্যে ছিল জাতির মুক্তি আন্দোলনে নিবেদিত অন্যান্য নেতাকর্মী ও আপামর জনতার ওপর নির্ভর করার আত্মবিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে, ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। আর পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী আলোচনার নামে প্রহসন চালাতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুধু এ দেশের জনগণই নয়,বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত, মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র, আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেন! এই সময় আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশাল ভূমিকা রাখে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আরও ত্বরান্বিত করে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী ও বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় লাভ করে। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ—পুরোটাই বঙ্গবন্ধুময়। জাতির পিতার অন্যতম স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণ। কিন্তু স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণযাত্রা ছিল নানাভাবে কণ্টকাকীর্ণ ও বিপৎসংকুল। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, ভৌত- অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট—বিধ্বস্ত। প্রশাসন ছিল অসংগঠিত। বৈদেশিক মুদ্রার শূন্য ভাণ্ডার ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জা, বন্যা, খাদ্যাভাব। অন্যদিকে বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু যখন খাদ্যাভাব দূরীকরণ, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী নীতি ও আইন প্রণয়ন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি ঘাতকেরা। ওরা ভেবেছিল মুজিবকে হত্যা করলেই হয়ে যাবে সব, কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি মুজিব মানেই বাংলাদেশ। একজন ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার আদর্শ এবং স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না।
যত দিন রবে এই বাংলার মাঠ, ঘাট প্রান্তর সেই মাটি মধ্যে বাতাসের মধ্যে – – যে ঘ্রাণ লেগে থাকবে – সেখানেই থাকবে -জাতির পিতার সংগ্রাম -রক্তাক্ত চোখের জল – রাজবন্দী সেলের তীব্র আর্তনাদ-কষ্টার্জিত স্বাধীনতা! হে জাতির পিতা, হে বঙ্গের বন্ধু এ মাটি কখনোই ভুলতে দেবে না তোমায়!
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
Credit:- এই বক্তব্যটি সবার সুবিধার জন্য ইউটিউব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
Tag:বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বক্তব্য,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ (বক্তৃতা,বক্তব্য ২০২৩ PDF) জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)