[লেখক-পরিচিতি: মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ১৮৯৬ সালে (২৮শে ভাদ্র ১৩০৩ সাল) সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে বি.এ. ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন এবং এখানেই লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটান। এরপর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি মাসিক মোহাম্মদী’, ‘দৈনিক মোহাম্মদী’, ‘দৈনিক সেবক, সাপ্তাহিক সওগাত’, ‘সাপ্তাহিক খাদেম, ইংরেজি ‘দি মুসলমান’ ইত্যাদি পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ । মহামানুষ মুহসীন, মরুভাস্কর, সৈয়দ আহমদ, স্মার্ণানন্দিনী, ছোটদের হযরত মুহম্মদ ইত্যাদি। তিনি খুব পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও যুক্তিবাদী মন নিয়ে সবকিছুর বিচার করতেন। সহজ সরল প্রকাশভঙ্গি তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর গদ্যশৈলী ঋজু, রচনা সাবলীল। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ১৯৩৫ সালে কলকাতা ছেড়ে বাঁশদহে ফিরে আসেন এবং সেখানেই ১৯৫৪ সালের ৮ই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।]
মানুষ মুহম্মদ (স.)
হযরতের মৃত্যুর কথা প্রচারিত হইলে মদিনায় যেন আঁধার ঘনাইয়া আসিল। কাহারও মুখে আর কথা সরে না; কেহবা পাগলের মতো কাণ্ড শুরু করে। রাসুলুল্লাহর পীড়ার খবর শুনিবার জন্য বহুলোক জমায়েত হইয়াছে।
কে একজন বলিলেন, তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে। বীরবাহু ওমর উলঙ্গ তরবারি হাতে লইয়া লাফাইয়া উঠিলেন, যে বলিবে হযরত মরিয়াছেন, তাহার মাথা যাইবে। মহামতি আবুবকর শেষ পর্যন্ত হযরতের মৃত্যুশয্যার পার্শ্বে ছিলেন। তিনি গম্ভীরভাবে জনতার মধ্যে দাঁড়াইলেন।
মানুষ মোহম্মদ (স.) ভিডিও লিংক
https://www.youtube.com/watch?v=dsWXVEPm8Jo
বলিলেন, যাহারা হযরতের পূজা করিত, তাহারা জানুক তিনি মারা গিয়াছেন; আর যাহারা আল্লাহর উপাসক, তাহাদের জানা উচিত আল্লাহ অমর, অবিনশ্বর। আল্লাহর সুস্পষ্ট বাণী: মুহম্মদ (স.)একজন রাসুল বৈ আর কিছু নন। তাঁহার পূর্বে আরও অনেক রাসুল মারা গিয়াছেন।
হযরত আবুবকরের গম্ভীর উক্তিতে সকলেরই চৈতন্য হইল। হযরত ওমরের শিথিল অঙ্গ মাটিতে লুটাইল। তাঁহার স্মরণ হইল হযরতের বাণী : আমি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ মাত্র। তাঁহার মনে পড়িল কুরআনের আয়াত: মুহম্মদ, মৃত্যু তোমারই ভাগ্য, তাহাদেরও ভাগ্য। তাঁহার অন্তরে ধ্বনিয়া উঠিল মুসলিমের গভীর প্রত্যয়ের স্বীকারোক্তি অমর সাক্ষ্য: মুহম্মদ (স.) আল্লাহর দাস (মানুষ) ও রাসুল।
তিনি রাসুল, কিন্তু তিনি মানুষ, আমাদেরই মতো দুঃখ-বেদনা, জীবন-মৃত্যুর অধীন রক্ত-মাংসে গঠিত মানুষ- এই কথাই বৃদ্ধ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) মূৰ্ছিত মুসলিমকে বুঝাইয়া দিলেন। তিনি মানুষের মন আকর্ষণ করিয়াছিলেন মুখ্যত তাঁহার মানবীয় গুণাবলি দ্বারা। মক্কার শ্রেষ্ঠ বংশে তিনি জন্মিয়াছিলেন। কিন্তু বংশগৌরব হযরতের সচেতন চিত্তে মুহূর্তের জন্যও স্থানলাভ করে নাই।
জন্মদুঃখী হইয়া তিনি সংসারে আসিয়াছিলেন। এই দুঃখের বেদনা তাঁহার দেহসৌন্দর্য ও চরিত্রমাধুরীর সহিত মিলিয়া তাঁহাকে নরনারীর একান্ত প্রিয় করিয়া তুলিয়াছিল। আবাল্য তিনি ছিলেন আলআমিন- বিশ্বস্ত, প্রিয়ভাষী, সত্যবাদী। তাঁহার অসাধারণ যোগ্যতা, বুদ্ধি, বিচারশক্তি, বলিষ্ঠ দেহ দেখিয়া মানুষ অবাক হইয়া যাইত।
লেখকঃ মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী |
হযরত যখন আসিলেন, কুটিরস্বামী আবু মা’বদ মেষপাল চরাইতে গিয়াছিলেন। তাঁহার পত্নী উম্মে মা’বদ ছাগীদুগ্ধ দিয়া হযরতের তৃষ্ণা দূর করিলেন। গৃহপতি ফিরিলে এই নারী স্বামীর কাছে নব অতিথির রূপ বর্ণনা করেন, সুন্দর, সুদর্শন পুরুষ তিনি।
বড় সুন্দর, বড় মনোহর সেই অপরূপ রূপের অধিকারী। সত্যই হযরত বড় সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। তাঁহার চেহারা মানুষের চিত্ত আকর্ষণে যতটুকু সহায়তা করে, তাহার সবটুকু তিনি পাইয়াছিলেন। সত্যের নিবিড় সাধনায় তাঁহার চরিত্র মধুময় হইয়া উঠিয়াছিল। কাছে আসিলেই মানুষ তাঁহার আপনজন হইয়া পড়িত। অকুতোভয় বিশ্বাসে তিনি অজেয় হইয়াছিলেন।
মক্কার পথে প্রান্তরে পৌত্তলিকের প্রস্তরঘায়ে তিনি আহত হইয়াছেন, ব্যঙ্গবিদ্রুপে বারবার তিনি উপহাসিত হইয়াছেন; কিন্তু তাঁহার অন্তর ভেদিয়া একটি মাত্র প্রার্থনার বাণী জাগিয়াছে;-এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর।
রক্তে রক্তে তাহার সমস্ত বসন ভিজিয়া গিয়াছে, দেহ নিঃসৃত রুধিরধারা পাদুকায় প্রবেশ করিয়া জমিয়া শক্ত হইয়াছে, মৃত্যুর আবছায়া তাহার চৈতন্যকে সমাচ্ছন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছে, তথাপি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তাঁহার বিন্দুমাত্র অভিযোগ নাই।
রমণীর রূপ, গৃহস্থের ধনসম্পদ, নেতৃত্বের মর্যাদা, রাজার সিংহাসন সব কিছুকে তুচ্ছ করিয়া সেই সত্যকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠতম সম্বল জ্ঞানে আশ্রয় করিয়াছিলেন; তাঁহাকে উপহাসিত, অবহেলিত, অস্বীকৃত দেখিয়াও ক্রোধ, ঘৃণা বা বিরক্তির একটি শব্দও তাঁহার মুখে উচ্চারিত হয় নাই।
আজ যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিতেছে, তাহাকে মারিতে উদ্যত হইয়াছে, হয়তো কাল তাহারা-তাহাদের অনাগত বংশধরেরা ইসলাম কবুল করিবে। আপনার আঘাত জর্জরিত দেহের বেদনায় তিনি কাতর। সত্যকে ব্যাহত দেখিয়া মনের ব্যথা তাহার সেই কাতরতাকে ছাপাইয়া উঠিল।
মক্কাবাসীরা হযরতের নবিত্ব লাভের শুরু হইতেই তাঁহার প্রতি কী নির্মম অমানুষিক অত্যাচার চালাইয়াছিল, আমরা দেখিয়াছি। যখন তাহাদের নির্যাতন সহনাতীত হইল, যখন দেখা গেল, কোরেশরা সত্যকে গ্রহণ করিবে না, হযরত মদিনায় চলিয়া গেলেন।
খয়বরের যুদ্ধে হযরতের পরাজয়ের মিথ্যা সংবাদ শুনিয়া হযরতের মৃত্যু সম্ভাবনায় আনন্দে আত্মহারা হইয়া পড়িল। হুদায়বিয়া সন্ধিতে হযরতের শান্তিপ্রিয়তার সুযোগ লইয়া মুসলিমের স্কন্ধে ঘোর অপমানের শর্ত চাপাইয়া দেওয়ার পরও তাহাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিতে চাহিল এবং তারপর হযরত যেই দিন বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করিলেন, সেই দিনও তাঁহার সহিত যুদ্ধকামনা করিয়া খালিদের সহিত হাঙ্গামা বাঁধাইয়া দিল।
মানুষের প্রতি প্রেমপুণ্যে উদ্ভাসিত এই সুমহান প্রতিশোধ সম্ভব করিয়াছিল হযরতের বিরাট মনুষ্যত্ব। শুধু প্রেম-করুণায় নয়, মানুষ হিসেবে আপনার তুচ্ছতাবোধ আপনার ক্ষুদ্রতার অনুভূতি তাহার মহিমাগৌরবকে মুহূর্তের জন্যও ছাপাইয়া উঠিতে পারে নাই।
আমি এমন এক নারীর সন্তান, সাধারণ শুষ্ক মাংসই ছিল যাহার নিত্যকার আহার্য। মহামহিমার মাঝখানে আপনার সামান্যতম এই অনুভূতিই হযরতের চরিত্রকে শেষ পর্যন্ত সুন্দর ও স্বচ্ছ রাখিয়াছিল। মানুষ ত্রুটির অধীন, হযরতও মানুষ, সুতরাং তাঁহারও ত্রুটি হইতে পারে। এই যুক্তির বলে নয়, বরং তাঁহার অনাবিল চরিত্রের স্বচ্ছ সহজ প্রকাশ মর্যাদাহানির আশঙ্কা তুচ্ছ করিয়া, লোকচক্ষে সম্ভাবিত হেয়তার ভয় অবহেলায় দূর করিয়া তিনি অকুতোভয়ে আত্মদোষ উদঘাটন করিয়াছেন।
একদিন তিনি মক্কার সম্রান্ত লোকদের কাছে সত্য প্রচারে ব্রতী। মজলিসের এক প্রান্তে বসিয়া একটি অন্ধ। সম্ভবত সে হযরতের দুইএকটি কথা শুনতে পায় নাই। বক্তৃতার মাঝখানে একটি প্রশ্ন করিয়া সে হযরতকে থামাইল। বাধা পাইয়া হযরতের মুখে ঈষৎ বিরক্তির আভাস ফুটিয়া উঠিল, তাঁহার ললাট সামান্য কুঞ্চিত হইল।
মানুষ হিসেবে যে ক্ষুদ্রতাবোধ, মানুষের সহজ দৈন্যের যে নির্মল অনুভূতি হযরতকে আপনার দোষত্রুটি সাধারণের চক্ষে এমন নির্বিকারভাবে ধরাইয়া দিতে প্ররোচিত করিয়াছিল, তাহাই আবার তাঁহার মহিমান্বিত জীবনে ইচ্ছা-স্বীকৃত দারিদ্রের মাঝখানে প্রদীপ হইয়া জ্বলিয়াছিল। অনাত্মীয় পরিপার্শ্বের মধ্যেও নিবিড় নির্বিচার ভক্তি, শ্রদ্ধা, স্বীকৃতি ও আনুগত্য তিনি বড় অল্প পান নাই। শত শত, বরং সহস্র সহস্র মুসলিম তাঁহার ব্যক্তিগত পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণ সংগ্রহ করিয়া দিতে সর্বদা শুধু ইচ্ছুক নয়, সমুৎসুক ছিল।
তাই তাঁহার গৃহে সকল সময় অন্ন জুটিত না, নিশার অন্ধকারে প্রদীপ জ্বালিবার মতো তৈলটুকুও সময় সময় মিলিত না। এমনি নিঃস্ব কাঙালের বেশে মহানবি মৃত্যু রহস্যের দেশে চলিয়া গেলেন। স্বামীর মহাপ্রয়াণে বিয়োগবিধুরা আয়েশার বক্ষ ভেদিয়া শোকের মাতম উঠিল, মানুষের মঙ্গল সাধনায় যিনি অতন্দ্র রজনী যাপন করিলেন, সেই সত্যাশ্রয়ী আজ চলিয়া গেলেন।
দুই বেলা পূর্ণোদর আহারও যাঁহার ভাগ্যে হয় নাই, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূর্ত প্রকাশ মহানবি আজ চলিয়া গেলেন। বিবি আয়েশার মর্মছেড়া এই বিলাপ সমস্ত মানুষের, সমগ্র বিশ্বের । শুধু সত্য সাধনায় নয়, শুধু ঊর্ধ্ব লোকচারী মহাব্রতীর তত্ত্বানুসন্ধানে নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহারে হযরত মোস্তফা ইতিহাসের একটি অত্যন্ত অসাধারণ চরিত্র।
শব্দার্থ ও টীকা:
বীরবাহ-শক্তিধারী।
স্থিতধী-স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন। ধী-বুদ্ধি।
রাসুল-আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।
পরহিব্ৰতী-পরের উপকারে নিয়োজিত।
বয়ান-মুখনিঃসৃত বাণী।
গ্রীবা-ঘাড়।
অকুতোভয়-নির্ভয়।
নির্যাতন-অত্যাচার, জুলুম।
কুসুমকোমল-ফুলের মতো নরম।
লোষ্ট্ৰীঘাত – ঢিলের আঘাত।
বৈরী-শত্রু।
অরাতি-শত্রু।
পৌত্তলিক-মূর্তিপূজক।
তিতিয়া-ভিজে।
সমাচ্ছন্ন-অভিভূত।
পূর্ণোদর-ভরপেট।
বীরবাহু ওমর-ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) ছিলেন একজন তেজস্বী বীরযোদ্ধা। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোরেশ বংশোদ্ভূত তরুণ বীর ওমর মহানবিকে হত্যা করার সংকল্প নিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন তাঁর ভগ্নীর কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের বাণী শুনে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত ওমর (রা) ছিলেন একজন বীরযোদ্ধা, ন্যায়পরায়ণ শাসক ও মহানবির বিশ্বাসভাজন সাহাবা।
রুধিরাক্ত-রক্তাক্ত, রক্তরঞ্জিত।
রাহী-পথিক, মুসাফির।
পুলকদীপ্তি-আনন্দের উদ্ভাস।
অনুরুদ্ধ-অনুরোধ করা হয়েছে এমন।
মহামতি আবুবকর-ইসলামের প্রথম খলিফা এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম পুরুষ ব্যক্তি। তিনি ছিলেন মহানবির হিজরতকালীন সঙ্গী এবং সারাজীবনের বিশ্বস্ত সহচর। তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ, আদর্শবাদী ও ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।
মক্কা-সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান নগরী। এখানে আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ অবস্থিত। এই নগরীতে রাসুলুল্লাহ (স.) জন্মগ্রহণ করেন।
মদিনা– সৌদি আরবে অবস্থিত মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় সম্মানিত নগরী। এখানে হযরত মুহম্মদ (স.) এবং হযরত আবু বকর (রা.) এর মাজার রয়েছে।
হিজরত-শাব্দিক অর্থ পরিত্যাগ। এখানে মক্কা ত্যাগ করে মদিনা যাত্রা বোঝানো হয়েছে। এই সময় থেকে হিজরি সাল গণনার শুরু।
তায়েফ– সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের একটি উর্বর প্রদেশ। বদর, ওহোদ, আহযাব, খয়বর- হযরতের জীবনকালে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে এ সব স্থানে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়েছিল।
হুদায়বিয়া– একটি যুদ্ধক্ষেত্র, এই স্থানে বিধর্মীদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) এর একটি সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এ সন্ধি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রাসুলুল্লাহর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।
খালিদ– হযরতের জীবিতকালে ইসলামের প্রখ্যাত বীরযোদ্ধা এবং সেনাপতি।
সাফা– সাফা ও মারওয়া দুটি ছোট পাহাড় কাবার নিকটে অবস্থিত। হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী বিবি হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাইলের পিপাসা নিবারণের জন্য পানির সন্ধানে এই দুই পাহাড়ের মধ্যে ছোটাছুটি করেছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে আজও হজব্রতীরা সাফা-মারওয়ায় দৌড়ে থাকেন।
পাঠ-পরিচিতি: ‘মানুষ মুহম্মদ (স.)’ প্রবন্ধটি মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী রচিত মরু ভাস্কর গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবিক গুণাবলি এ প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। হযরত ছিলেন মানুষের নবি। তাই মানুষের পক্ষে যা আচরণীয় তিনি তারই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি বিপুল ঐশ্বর্য, ক্ষমতা ও মানুষের অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মধ্যে থেকেই একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করে গেছেন। ক্ষমতা ও মহত্ত্ব, প্রেম ও দয়া তাঁর অজস্র চারিত্রিক গুণের মধ্যে প্রধান। তাঁর সারা জীবন মানব জাতির কল্যাণের জন্য নিয়োজিত ছিল। মানুষের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে তিনি তাঁর জীবন রূপায়িত করে তুলেছিলেন। তাঁর সাধনা, ত্যাগ, কল্যাণচিন্তা ছিল বিশ্বের সমগ্র মানুষের জন্য অনুকরণীয়। হযরত মুহম্মদ (স.) এর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীগণের মধ্যে যে বেদনা ও হতাশা দেখা দিয়েছিল তা প্রশমন করার জন্য হযরত আবুবকর (রা) মহানবি (স.)-এর জীবনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে প্রচণ্ড শোককে শান্ত করেন। মানুষ হিসেবে হযরতের বৈশিষ্ট্যের আলোচনাই এ প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়।
অনুশীলনী
কর্ম-অনুশীলন
হযরত মুহম্মদ (স.) -এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটি তালিকা তৈরি কর।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১। সত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হযরত মুহম্মদ (স.) কাদের কাছে উপহাসিত হয়েছিলেন?
ক. ইহুদিদের
খ. খয়বরবাসীদের
গ. পৌত্তলিকদের
ঘ. হুদায়বিয়াবাসীদের
২। এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর’- এ উক্তিতে হযরত মুহম্মদ (স)-এর কোন গুণটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. সহনশীলতা
খ. উদারতা
গ. মহানুভবতা
ঘ. বিচক্ষণতা
৩. ‘আমি রাজা নই, সম্রাট নই, মানুষের প্রভু নই। আমি এমনই এক নারীর সন্তান, সাধারণ শুষ্ক মাংসই ছিল যাহার নিত্যকার আহার্য, এ বক্তব্যে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্রের ফুটে ওঠা দিকটি হলো-
i. নিরহংকার
ii. বিচক্ষণতা
iii. সত্যনিষ্ঠা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. i ও ii
ঘ. ii ও iii
৪। উদ্দীপকে প্রতিফলিত বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে কোনটি?
ক, একটিমাত্র পিরান কাচিয়া শুকায় নি তাহা বলে রৌদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা তলে।
খ. তুমি নির্ভীক এক খোদা ছাড়া কররানিকো কারে ভয় সত্যব্রত তোমায় তাইতো সবে উদ্ধত কয়।
গ. উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।
ঘ. বায়তুল মাল হইতে লইয়া ঘৃত-আটা নিজ হাতে বলিলে, এসব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের ‘পরে।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
হযরত নূহ (আ) ধর্ম ও ন্যায়ের পথে চলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এতে মাত্র চল্লিশ জন মানুষ সাড়া দেন। বাকিরা সবাই তার বিরোধিতা শুরু করে নানা অত্যাচারে তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এ অত্যাচারের মাত্রা সহনাতীত হলে তিনি একপর্যায়ে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান। আল্লাহর হুকুমে তখন এমন বন্যা হয় যে, ঐ চল্লিশ জন বাদে সকল অত্যাচারী ধ্বংস হয়ে যায়।
ক. হযরত মুহম্মদ (স.) কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. সুমহান প্রতিশোধ বলতে কী বোঝায়?
গ. হযরত নূহ (আ) যেদিক দিয়ে হযরত মুহম্মদ (স.) থেকে ভিন্ন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হযরত নূহ (আ)-এর চরিত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আনলে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর একটি বিশেষ গুণ তাঁর মধ্যে ফুটে উঠত? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।