প্রবন্ধ রচনা : সম্প্রীতি – Bangla Note Book – বাংলা ব্যাকরণ শিখুন সহজে

সম্প্রীতি

ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ নিজের অস্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশের প্রয়োজনেই গড়ে তুলেছে সমাজ। আর সমাজ গড়ে তোলার নিয়ামক হিসেবে মানুষকে ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা বিসর্জন দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও পরার্থপরতার নীতি অবলম্বন করতে হয়েছে। উন্নতি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে মানুষ সামবায়িক কর্মপ্রচেষ্টা চালিয়েছে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি- গোত্রে বিভক্ত হয়েও মানুষ বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতার পথে হাঁটেনি; বরং পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সভ্যতার চাকাকে গতিময় করেছে। আজকের সভ্যতা সকল মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার অনন্য ফসল; এ সভ্যতায় সকলের সমান উত্তরাধিকার। আর মানবসভ্যতার বুনিয়াদ নির্মিত হয়েছে প্রেম, মৈত্রী, শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তিমূলে দাঁড়িয়ে। উল্লেখ্য, কিছু স্বার্থান্ধ মানুষ নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষে মানুষে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়ে মানবসভ্যতার স্থিতি ও সমৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

সম্প্রীতি কী : সম্প্রীতি শব্দের আভিধানিক অর্থ সদ্ভাব, সৌহার্দ্য, প্রেম, প্রণয়, সন্তোষজনক আচরণ, সুভাব, সন্তোষ ইত্যাদি। প্ৰেম, সৌহার্দ্য, সদ্ভাব এসব সম্পর্কের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে পারস্পরিক শান্তিময় সহাবস্থানই হচ্ছে সম্প্রীতি । অন্যভাবে বলা যায়, মানুষে মানুষে প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধনই হচ্ছে সম্প্রীতি। ধর্মে-বর্ণে-জাতি-গোত্রে বিভিন্ন পরিচয় থাকলেও মানুষের চূড়ান্ত পরিচয় ‘মানুষ’ হিসেবে। স্বীয় স্বাতন্ত্র্য ও ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকেও প্রতিটি শুভবোধসম্পন্ন মানুষের গভীরতর প্রত্যয় এই : “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”

সম্প্রীতি

সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা : মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই সভ্যতা নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। মানবসভ্যতার যতগুলো অর্জন, তার সবই সমগ্র মানবকূলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফসল। মানুষের মহৎ কোন আবিষ্কার বা সৃষ্টি কোন জাতি, গোত্র বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; দেশ-কাল-সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ বেড়া ডিঙিয়ে তা হয়ে ওঠে বিশ্বের সকলের। মানব প্রগতির স্রোতোধারায় রয়েছে সকল জাতির সকল ধর্মের, বর্ণের সম্মিলিত মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার অবদান। সকল শুভবোধসম্পন্ন মানুষের ঐকান্তিক চাওয়া হলো শান্তিময়, সমৃদ্ধ বিশ্ব। আর এর জন্য দরকার ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, পরমতের প্রতি সহিষ্ণু হওয়া, নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবার অহম্ ত্যাগ করা, অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পরিহার করা। অন্যের মনোভাব, অভিমত, ধারণা বা বিশ্বাসের সঙ্গে একমত না হতে পারলেও তার প্রতি সহানুভূতি, সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা অপরিহার্য। আধুনিক বিশ্ব অগ্রসর হচ্ছে বহুমত ও বহুপথকে যুগপৎ ধারণ করে। শান্তিময়, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ পৃথিবী নির্মাণের জন্য সম্প্রীতির বন্ধনের বিকল্প নেই। কোন কারণে সম্প্রীতি নষ্ট হলে সমাজে বিভেদ বাড়ে, বাড়ে অন্যের ক্ষতি করার পাশবিক উল্লাস। পরিণামে দেখা দেয় সংঘর্ষ ও হানাহনি। অশান্তির বিষ প্রবেশ করে সমাজদেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে; সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথ হয়ে যায় রুদ্ধ। মানবকল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন মূল্যে সমাজে সম্প্রীতি রক্ষা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে ভলতেয়ারের বক্তব্য স্মরণীয় : “তোমার কথার সঙ্গে আমি একমত হতে না পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।” বস্তুত পরমত সহিষ্ণুতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সম্প্রীতির বীজ।

রক্তক্ষয়ী বিশ্ব-পরিস্থিতি : শুভবোধসম্পন্ন মানুষেরা যেমন মানুষে মানুষে সম্প্রীতি রক্ষায় নিবেদিত; এর বিপরীত পিঠে তৎপর রয়েছে সম্প্রীতি বিনষ্টকারী স্বার্থান্ধ অশুভ শক্তি। ব্যক্তি বা মহলবিশেষ ক্ষমতার লোভে, অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অথবা গোষ্ঠী-স্বার্থে ভেদবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে গড়ে তুলেছে বিভেদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর; বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে বিপরীত পক্ষকে ঘায়েল করার প্রাণঘাতী ফিকিরে লিপ্ত হয়েছে; রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বা যুদ্ধ বাঁধিয়ে রক্তাক্ত করছে জনপদ। এভাবে যুগে যুগে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সংঘর্ষে, যুদ্ধে, দাঙ্গায় কত জনপদ ধ্বংস হয়েছে, কত মানুষ নিহত হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। এই দ্বন্দ্বে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী সহজ ও কার্যকর ইন্ধন হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে ধর্মকে। হীন সাম্প্রদায়িকতার মূল নিহিত রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের গোড়ামি ও অন্ধবিশ্বাসে। ধর্ম- ব্যবসায়ীদের কারণেই মানুষে মানুষে সীমাহীন বিভেদ ও বিদ্বেষের অগ্নিদহন। অথচ প্রতিটি ধর্মের গোড়ার কথা মানবকল্যাণ ও শান্তি । প্রত্যেকের ধর্ম প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে পালন করবে এবং অন্যকেও নির্বিঘ্নে ধর্মপালনের সুযোগ করে দেবে এটাই প্রতিটি ধর্মের নৈতিক শিক্ষা। সকল ধর্মই পারস্পরিক সহাবস্থান ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামে ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। ধর্মের নামে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, হানাহানি ও রক্তক্ষয়ে লিপ্ত হওয়া ধর্মের মূল চেতনাকেই ধ্বংস করে। পরিতাপের বিষয় হলো- বিশ্ব আজ অশান্ত, বিধ্বস্ত, রক্তরঞ্জিত ধর্মীয় উগ্রপন্থার কারণে। বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের নোংরা হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে ধর্ম। রাজনীতিবিদেরা ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে সহজেই হাসিল করে নিচ্ছে নিজের স্বার্থ ও প্রভাব। এছাড়া জাতি-বৈরিতা ও বর্ণ-বিদ্বেষ থেকেও বহু জাতি ও রাষ্ট্র যুদ্ধে, সংঘর্ষে, দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা । ক্ষমতালোভী, জাত্যাভিমানী ও আধিপত্যবাদী নরপশুদের সহিংসতায় কালে কালে, দেশে দেশে রক্তরঞ্জিত ও কলঙ্কিত হয়েছে মানবেতিহাস। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের সহিংসতা মানবতার জন্য এক গভীর ক্ষত। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রমত্ত আগ্রাসনে নির্মূল হতে হয়েছে আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান ও অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের। প্রবল জাত্যাভিমানী ও ক্ষমতালোভী হিটলারের গ্যাসচেম্বারে নিহত হতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে। আবার ইহুদিরাই সকল প্রকার ন্যায়নীতি আর মানবতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্যালেস্টাইনে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কতিপয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিশ্ব-আধিপত্য বজায় রাখার কৌশল হিসেবে এই নৃশংসতাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। ভারতবর্ষে ক্ষমতার দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ইংরেজরা বিবেকবর্জিত দমনপীড়নের আশ্রয় নিয়েছে; ভ্রাতৃপ্রতিম দুই সম্প্রদায়- হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কৌশলে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরস্পরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য ভয়াবহ দাঙ্গা। ভারতকে বিভক্ত করার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এ জনপদে অশান্তির স্থায়ী বীজ রোপণ করে দিয়ে গেছে। জাতিগত সহিংসতার কারণে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়ায়, সোমালিয়ায়, মায়ানমারে এবং আরো বহু দেশে । ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সহিংসতায় মধ্যপ্রাচ্য আজ বিপন্ন। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে সহিংসতায় প্রতিনিয়ত নিহত হচ্ছে মানুষ; মানুষের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে ধরণীর বুক। ধর্মীয় উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়; উগ্রপন্থীদের হাত থেকে আজ কেউ নিরাপদ নয়। ধর্মীয় উগ্রপন্থা আজকের পৃথিবীকে এক গভীর সংকটে নিপতিত করেছে।

বাংলাদেশে সম্প্রীতির ঐতিহ্য ও বর্তমান অবস্থা : বাংলাদেশের মানুষের মনের জমিন এদেশের পলিমাটির মতোই নরম; হিংসা, হানাহানি, হিংস্রতা, ক্রুরতার সঙ্গে এদেশের মানুষের সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ। সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায়, সম্পদে-বিপদে যূথবদ্ধ থাকার এক অবিনশ্বর চেতনা বাঙালি জাতি তার সত্তার গভীরে লালন করে। ধর্ম-বর্ণ-জাতির চেয়ে এখানে মানুষের পরিচয়ই সবচেয়ে বড়। মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি চণ্ডীদাসের কণ্ঠে বাঙালির শাশ্বত বিশ্বাসেরই প্রতিফলন ঘটেছে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ । নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই এদেশের মানুষ পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনের হাজার বছরের ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন সময়ে স্বার্থান্ধদের প্ররোচনায় এই সম্প্রীতির বন্ধনে কখনো কখনো মোচড় লেগেছে, কিন্তু ছিন্ন কখনোই হয়নি। ব্রিটিশদের ভারতশাসনে বিভাজনের ঔপনিবেশিক নীতি আমাদের হাজার বছরের সম্প্রীতির বন্ধনকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মুসলমানদের আনুকূল্য দেওয়ার অজুহাতে ১৯০৫ সালে বঙ্গ-বিভক্তির মধ্য দিয়ে হিন্দু-মসলমান দুই সম্প্রদায়কে কার্যত বিভক্ত করা গেছে। ১৯১২ সালে বঙ্গ আবার একীভূত হলেও ভাঙার রেখাটি রয়েই গেছে। এরপর ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই বিভাজন দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনিবার্য পরিণাম হিসেবে ১৯০৫ সালের রেখা ধরেই বাংলা আবার বিভক্ত হয়। এরমধ্যে সম্প্রীতির বাংলায় ঘটে গেছে ভয়াবহ দাঙ্গা; লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই অহিংসার ভূমি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই বাঙালি তার সত্তানিহিত সম্প্রীতির চেতনায় ফিরে আসে। এ যেন এক মহাঘোর কাটিয়ে আবার নিজের মধ্যে ফিরে আসা। বাংলা ভাষার ওপর আঘাতেই বাঙালি জাতিসত্তার পরিপূর্ণ পুনর্জাগরণ ঘটে। পাকিস্তানিদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রতিবাদী হওয়ার শক্তি জুগিয়েছে এর অন্তর্নিহিত সম্প্রীতি চেতনা। পাকিস্তানি শাসকেরা বহু ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে এ সম্প্রীতি চেতনাকে বিনষ্ট করার প্রয়াস হিসেবে। ১৯৬৪ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির একটি চেষ্টা চালানো হয় পাকিস্তানি শাসকদের প্ররোচনায়; কিন্তু বাঙালি জাতি সেই অপচেষ্টা প্রবলভাবে প্রতিহত করেছে। বাঙালি জাতির সম্প্রীতি চেতনার ভিত্তিতেই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সকলের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশের বুনিয়াদ। স্বাধীন বাংলাদেশেও পাকিস্তান-পন্থী কিছু দোসরের প্ররোচনায় সময়ে সময়ে সম্প্রীতির চেতনায় চিড় ধরেছে। কিন্তু সকল অপচেষ্টাকে পরাভূত করে বাঙালির সম্প্রীতিবোধ অটল আছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এর প্রসার ঘটানোর একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলমান আছে। কিছু জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামের ভুল ব্যাখ্যায় প্ররোচিত করে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে কথিত জিহাদে উদ্বুদ্ধ করছে। মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত মতাদর্শীদের সহিংসতায় রক্তাক্ত হচ্ছে এ জনপদ; গুলশানের হলি আর্টিজানের ঘটনা এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত। কিন্তু এদের নৃশংসতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এদেশের মানুষ, তাদের করুণ পরিণতিতে কেউ কোনো অনুকম্পা দেখায়নি, এমনকি তাদের মা-বাবারাও নয়। এটিই সম্প্রীতির বাংলাদেশের আসল পরিচয়।

বাংলাদেশে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য করণীয় : বাংলাদেশের সহিংসতারইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সমাজের ক্ষুদ্র একটি স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে এদেশের ধর্মানুরাগী মানুষদের কাছে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করেছে। এই প্রবণতা রোধ করার জন্য ধর্মের সঠিক শিক্ষা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। কুসংস্কারমুক্ত, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন, বিজ্ঞান-মনস্ক মানুষ তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশের সকল নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। সামাজিক ন্যায় ও রাষ্ট্রীয় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। নীতি-নির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, পরিপার্শ্বে যখন অন্যায়, অত্যাচার জুলুম চলতে থাকে, তখন যুবকদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয় এবং এ থেকে পরিত্রাণের জন্য এরা পথ খুঁজতে থাকে। এ সুযোগটিই নিয়ে থাকে সুবিধাবাদীরা। পারিবারিক পর্যায়েও সুস্থতার সংস্কৃতি চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার : বাংলাদেশের রয়েছে সম্প্রীতির এক গর্বিত ইতিহাস। সম্প্রীতির ভিতে গড়ে উঠা বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সংঘাতপূর্ণ ও হিংসাত্মক পৃথিবীতে সম্প্রীতির পতাকা হাতে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেবে –এটাই এদেশের সকল মানুষের স্বপ্ন। এর জন্য সুরক্ষিত করতে হবে আমাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে। স্বার্থান্ধ ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে থাকবে না, তাদের অপচেষ্টা চলতেই থাকবে; তবে বাঙালির শাণিত চেতনা তাদের অপচেষ্টাকে শক্তহাতে প্রতিহতও করবে–ইতিহাস আমাদেরকে এভাবেই আশ্বস্ত করে।

Leave a Comment