↬ একজন বীর যোদ্ধা
↬ একজন বীর শহিদের কথা
ভূমিকা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম
আত্মদানকারী বীর হলেন আবু সঈদ। কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে
পুলিশের গুলির সামনে নির্ভয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনের কথা ভাবতে গেলেই মানব হৃদয়ে সবার আগে তাঁর চিত্র ভেসে ওঠে।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন : আবু সাঈদ ২০০১
সালে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে মকবুল হোসেন ও মনোয়ারা বেগমের
ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। আবু সাঈদ ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। তিনি স্থানীয়
জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টফুল বৃত্তি
পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন
জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। তারপর ২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫
পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি
বিভাগে ভর্তি হন। তিনি তাঁর বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অবদান : ২০২৪
সালের ৬ই জুন কোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন।
আন্দোলনকে বেগবান করতে আবু সাঈদ ১৫ই জুলাই উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে অবদানকারী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদ শামসুজ্জোহাকে উল্লেক করে ফেসবুকে একটা
পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন
স্যার (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার। স্যার! আপনার
সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল সবাই তো মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি
আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।
১৬ই জুলাই দুপুর ২টা থেকেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে আন্দোলনকর্মীরা বিক্ষোভ
করছিল। আবু সাঈদ এই আন্দোলনের সম্মুখভাগেই অবস্থান করছিলেন।
শাহাদাতবরণ : ১৬ই জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে
তিনটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের
মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ
করে। ছাত্রদের সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ হাতে একটি লাঠি নিয়ে দুহাত প্রসারিত করে
দাঁড়িয়ে যান। এই অবস্থায় পুলিশ আনুমানিক ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে তার উপর ছররা গুলি
ছোড়ে। তারপরও অবস্থান থেকে সরেননি আবু সাঈদ, দাঁড়িয়েই ছিলেন। একপর্যায়ে কয়েকটি
গুলি শরীরে বিদ্ধ হলে ক্ষবিক্ষত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অন্যান্য
শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই
তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

আবু সাঈদের শাহাদাতবরণে প্রতিক্রিয়া : আবু
সাঈদের বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়া ছিল আন্দোলনের সবচেয়ে কার্যকর
চিত্র। তাঁর শহিদ হওয়া আন্দোলনের গতিকে আরও বেগবান করে। স্ফুলিঙ্গের মতো সারা
আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে। যা আন্দোলনটিকে শেষ পর্যন্ত সরকার
পতনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়।
কিংবদন্তি : আবু সাঈদ একজন কিংবদন্তি। কবি
শহীদুল্লাহ ফরায়েজি ‘প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ’ নামে একটি কবিতা লিখেন।
আন্দোলনকর্মীরা রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ নাম
দিয়েছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলগেটের নাম “শহিদ
আবু সাঈদ গেইট” নামকরণ করেন।
উপসংহার : শহিদ আবু সাঈদ বাংলার গর্বিত আদর্শ
সন্তান। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি দেশমাতৃকার সেবা করে গেছেন। তিনি শহিদ হয়েছেন
বটে, কিন্তু বেঁচে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে। ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা
থাকবে।