নিজ এলাকার পানির উৎস দূষণের কারণ অনুসন্ধান,প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রতিকারে সুপারিশ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ | এসএসসি এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর বিজ্ঞান -এসাইনমেন্ট ২ (৫ম সপ্তাহ)

এসএসসি এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর বিজ্ঞান -এসাইনমেন্ট ২ (৫ম সপ্তাহ)  

নিজ এলাকার পানির উৎস দূষণের কারণ অনুসন্ধান,প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রতিকারে সুপারিশ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ

পানি দূষণ : পানির অপর নাম জীবন । পানি ছাড়া জীবন বাঁচতে পারেনা । তবে দূষিত পানি মানুষের তথা জীব জগতের জন্য । ক্ষতিকর । পানি নানাভাবে দুষিত হচ্ছে । পানির ব্যবহার ব্যাপক ও সর্বত্র । আমরা পানি ব্যবহার করে থাকি তৃষ্ণা মেটাতে , পরিষ্কার করার কাজে , চাষাবাদের কাজে , শক্তির উৎস হিসেবে এবং আরাে অনেক কাজে । নদী – নালা এবং পুকুর হচ্ছে আমাদের মিঠা পানির প্রধান উৎস । বিভিন্ন কারনে পানি ব্যবহার অনুপােযােগী হয়ে পড়তে পারে । মানুষসহ অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য নিরাপদ নয় , পানির এমন অবস্থাকে পানিদূষণ বলা হয় ।

আমার এলাকার পানির উৎসগুলাের তালিকাসহ একটি উৎসের পানি দূষণের কারণ : 

আমার এলাকার পানির প্রধান উৎসগুলাে হচ্ছে নদী , পুকুর , খাল বিল এবং টিউবওয়েল । এই উৎসগুলাের মধ্যে আমার এলাকার নদীর পানি দূষণের কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলাে : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ । আমার এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে । কৃষকদের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার , কীটনাশক ইত্যাদি দেওয়ার ফলে সেগুলাে বৃষ্টির সাথে মিশে নদীনালা , পুকুরে পড়ে পানিকে দূষিত করে । তাছাড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নদীতে গােসল করে এবং গৃহপালিত গরু – ছাগলকে নদীকে গােসল করানাের ফলে নদীটির পানি দূষিত হচ্ছে । এলাকার লােকজন নদীতে কাপড় – চোপড় ধােয়ার কারণেও নদীর পানি দূষিত হচ্ছে । তাছাড়া এই নদীর পানি দূষণের আরাে একটি কারণ হচ্ছে প্রকৃতি । বন্যা ও জলােচ্ছাসে মানুষ ও পশু পাখির মলমূত্র পানিতে মিশে এই নদীকে দূষিত করে ।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব : 

নিচে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর পানির দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব তথা ফলাফল উল্লেখ করা হলাে : 

১। পানিতে পচনশীল জৈব পদার্থের পরিমাণ যত বেশি হয় , সেগুলিকে বিশ্লিষ্ট ( decompose ) করার জন্য তত অধিক পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়ােজন হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ হাস পায় , যা জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য খুবই ক্ষতিকর । এমতাবস্থায় জলজ জীবের মৃত্যুও ঘটতে পারে । 

২। বিভিন্ন রােগ সৃষ্টিকারী জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানুষের কলেরা , টাইফয়েড , ডাইরিয়া , আমাশয় , পরিপাকতন্ত্র প্রদাহ , যকৃত প্রদাহ ইত্যাদি বিভিন্ন রােগের সৃষ্টি হয় । 

৩। পানিতে অধিক পুষ্টি উপাদানের ( উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান ) উপস্থিতিতে শৈবাল ও অন্যান্য আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ ব্যাপক হারে জন্মায় এবং এদের পচনের ফলে পানি দূষিত হয় । এভাবে পানির দূষণে জলজ প্রাণীর বাসের অনুপযােগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় , এমনকি জলজ প্রাণীর পারে । 

৪। কৃত্রিম জৈব পদার্থ দ্বারা দূষিত পানি শিশু , সংবেদনশীল উদ্ভিদ এবং ক্ষেত্রবিশেষে জলজ প্রাণীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে 

৫। দীর্ঘ সময় ধরে অপরিবর্তনশীল কীটনাশকের অংশ বিশেষ ( যেমন- ডিডিটি ) কোন কোন মাত্রায় মাছ ও অন্যান্য জলজ জীবের জন্যে প্রত্যক্ষভাবে এবং খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মৎস্যভূক পাখি ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর । 

৬। ক্ষতিকর মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থযুক্ত পানি ব্যবহার করলে , পানিতে সাঁতার কাটলে , তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত মাছ খেলে , কলকারখানার তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত পানি ব্যবহার করলে মানুষের ক্যান্সারসহ নানা রকম জটিলরােগ সৃষ্টি হতে পারে এবং এই শিশুর জন্ম হতে পারে । 

৭। তেল দ্বারা পানি দূষণের ফলে আমিষজাতীয় খাদ্য সরবরাহকারী মাছ ও ঝিনুকজাতীয় প্রাণী এবং অন্যান্য জলজ জীব তেলের প্রভাবে । ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক সময় মারাও যেতে পারে । তেল দ্বারা । দূষিত পানিতে চিংড়ির বংশবৃদ্ধি কমে যায় । 

৮। পানিতে মিশ্রিত ভারী ধাতু , যেমন- পারদ , সীসা , আর্সেনিক প্রভৃতি প্রাণীদেহে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন রােগের সৃষ্টি করে , অনেক ক্ষেত্রে প্রাণীর মুত্যু ঘটে । পারদ মানব দেহে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হয় ।

পানির উৎসগুলাে দূষণমুক্ত রাখতে প্রস্তাবনা : 

নিচে পানি দূষণ থেকে প্রতিকারের উপায়গুলি উল্লেখ করা হলাে : 

১। শহর ও বন্দরের আবর্জনা ও নর্দমার বর্জ্য নদ – নদী , খাল – বিলে গড়িয়ে পড়ার আগে শােধন করা উচিত । 

২। নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যক । নদীর তলদেশে যাতে পলি জমতে না পারে সেজন্য নিয়মিত ড্রেজিং প্রয়ােজন । 

৩। কৃষি জমিতে জৈব সার এবং পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়ােগ করা উচিত । ফলে অতিরিক্ত সার জলাশয়ের পানিকে দূষিত করতে পারবে না । 

৪। শিল্প ও কল – কারখানার বর্জ্য পাশ্ববর্তী জলাশয় ও নদ – নদীতে পড়ার পূর্বে শােধন করা প্রয়ােজন । 

৫। খােলা মাটিতে রাসায়নিক দ্রব্য , রং অথবা গাড়ীর তেল কখনও ফেলা উচিত নয় । কেননা এ সমস্ত দ্রব্য মাটি চুয়িয়ে ভূ – গর্ভস্থ পানি দূষিত করে। 

৬। কীটনাশক , ছত্রাকনাশক ও আগাছানাশক এর যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করা উচিত ।  

৭। পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানাে বন্ধ করা ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ প্রয়ােজন । 

৮। সর্বস্তরের মানুষকে পানি দূষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া প্রয়ােজন এবং এর প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহ চিত্র জনসাধারণের নিকট তুলে ধরা প্রয়ােজন । প্রয়ােজনবােধে ফেইসবুক , ওয়াটসঅ্যাপ , টুইটার প্রভৃতি সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম তথাপি জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলাে ব্যবহার করে জনগণকে সচেতন ও সতর্ক করা যেতে পারে ।

২০২২ সালের এসএসসি ৫ম সপ্তাহের বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট সমাধান

Tag: এসএসসি এসাইনমেন্ট ২০২২ উত্তর বিজ্ঞান -এসাইনমেন্ট ২ (৫ম সপ্তাহ),  ২০২২ সালের এসএসসি ৫ম সপ্তাহের বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট সমাধান, নিজ এলাকার পানির উৎস দূষণের কারণ অনুসন্ধান,প্রভাব বিশ্লেষণ এবং প্রতিকারে সুপারিশ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ

(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)

Leave a Comment