নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অথবা কারাে কাছ থকে শােনা একটি ভ্রমণ কাহিনির বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা কর

নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অথবা কারাে কাছ থকে শােনা একটি ভ্রমণ কাহিনির বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা কর

Class 6 six 9 week Bangla Assignment Answer 2021 

আমার ভ্রমণকাহিনী 

ভ্রমণ আমাদের বর্তমান জীবনের এমন একটি অংশ যাকে অস্বীকার করে কোনােভাবেই ভালাে থাকা যায় না । ভ্রমণ আমাদের ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে পুনরায় কোন এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তােলে । আমি আদ্যোপান্ত একজন ভ্রমণপিপাসু বাঙালি  প্রত্যেক বছর কোথাও – না – কোথাও ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুদিনের মুক্তি খুঁজে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি ছুটে যাই। তেমনই আমার এই বছরের ভ্রমণ গন্তব্য মােহময়ী সুন্দরবন ।

আমাদের গন্তব্য সুন্দরবনের যাত্রা শুরু হয় কমলাপুর স্টেশন থেকে । এইখান থেকে লােকাল ট্রেনে চেপে খুলনা স্টেশন হয়ে বাস কিংবা অটোতে আমরা পৌছে গেছিলাম সােনাখালি লঞ্চঘাট । সেখান থেকে লঞ্চে করে সুন্দরবনের বুকে একটু একটু করে আমাদের প্রবেশ শুরু । লঞ্চে ওঠার পর থেকেই মুহূর্তে মুহূর্তে চারপাশের দৃশ্য বদলে যেতে থাকে । 

বেশ খানিকটা যাওয়ার পর দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের নাম – না – জানা গাছ , পাখিদের মিষ্টি আওয়াজ নদীর দুপাশ থেকে কানে ভেসে আসে । লঞ্চ থেকে জলের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম বিখ্যাত গাঙ্গেয় ডলফিন বা চলতি ভাষায় যাকে বলা হয় শুশুক ।

 সুন্দরবন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর।বিভিন্ন নাম না জানা গাছ , পাখিদের আওয়াজ আর অদ্ভুত এক মায়াবী নিস্তব্ধতা সমগ্র প্রকৃতিকে যেন ঘিরে রেখেছে । এরইমধ্যে শ্বাসমূল আর ঠেস মূল যুক্ত গাছগুলি পরিবেশকে আরাে মায়াবী করে তুলেছে । পথে চলতে চলতে চোখে পড়ল বিভিন্ন ধরনের অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর সব ফুল আর লতা গুল্ম । গাইডের থেকে শুনলাম এই জঙ্গলে বহু ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায় । সবচেয়ে মনমুগ্ধকর গাছ গুলির মধ্যে চোখে পড়ল বিখ্যাত সুন্দরী , গরান ও গেওয়া গাছ । 

সুন্দরবনের জঙ্গলের আরেকটি সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হলাে এখানকার প্রাণীকুল । সুন্দরবনের স্থলভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য । এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হলাে রয়েল বেঙ্গল টাইগার । যদিও বর্তমানে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযােগ্যভাবে কমে যাওয়ার দরুন সহজে বাঘ চোখে পড়ে না । 

জঙ্গল সাফারির প্রথম দিনে আমরাও বাঘ দেখতে পাইনি । তবে চোখে যা পড়েছিল তা কোনাে অংশে কম নয় । দূর থেকে আমরা দেখেছিলাম সুন্দরবনের বিখ্যাত চিত্রা হরিণের পাল জল খেতে এসেছে নদীর ধারে গাছের ডাল থেকে উড়ে যাচ্ছে অদ্ভুত সুন্দর রঙের পাখিরা ।

 আমাদের গাইডের সাহায্যে গাছের উপরে দেখতে পেলাম অদ্ভুত সুন্দর গিরগিটি । এছাড়া চোখে পড়ল গােসাপ , বন বিড়াল আরাে কত কি । জঙ্গলে অত্যন্ত সুদর্শন কিন্তু ভয়ংকর বিষাক্ত বহু সাপ রয়েছে । তাদের থেকে সাবধান থাকার জন্য ভ্রমণের সময় সঙ্গে গাইড এবং কার্বলিক অ্যাসিড রাখা বাধ্যতামূলক । 

জঙ্গল সাফারির পরের দিন শুরু হলাে সুন্দরবনের জলপথে আমাদের রােমাঞ্চকর ভ্রমণ । সুন্দরবনের জলপথ অন্যান্য জায়গা থেকে একেবারে অন্যরকম । কাছাকাছি মােহনা থাকার কারণে এখানকার জলভাগের প্রাণীবৈচিত্র্যও অন্যান্য জায়গা থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক আলাদা । 

বড় একটি লঞ্চে চেপে আমরা সেইদিন রওনা হলাম সুন্দরবনের আরাে ভেতরে । সাথে সাথে নদীর দু’পাশের অরণ্যও ঘন হয়ে উঠতে থাকলাে । লঞ্চ থেকে নদীর দিকে তাকাতে আবারও চোখে পড়লে শুশুক , তাছাড়া দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের মাছ , বক , মাছরাঙ্গা পাখি ইত্যাদি । ইতিমধ্যে কয়েকবার কয়েকটি কচ্ছপও চোখে পড়ল।বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর নদীর একপাশে কাদার উপর দেখতে পেলাম দুটি কুমির রোদ পােহাচ্ছে ।

 জলপথে ভ্রমণের পরের দিন আমাদের গাছের ঘর বা ট্রি – হাউসে থাকার একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হল । জঙ্গলের বেশ খানিকটা ভিতরে একটি বড় গাছের ওপর সুন্দর ছােট ছিমছাম একটি ট্রি – হাউজ সেইখানেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল । দিনের বেলা সেই ঘর থেকে আশেপাশের জঙ্গল দেখা যায় । 

এখানকার স্থানীয়দের মাটির হাঁড়িতে রান্না করা বন মােরগের মাংসের ঝােলের স্বাদ কোনদিন ভুলতে পারবােনা । তাছাড়া জলবিহারের দিন লঞ্চের রান্না হওয়া কাঁকড়ার ঝােলও ছিল অনবদ্য । এছাড়া এখানকার বন থেকে সংগ্রহ করা খাটি মধুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় । বাকি দিনগুলিতে বিভিন্ন ধরনের টাটকা সুস্বাদু মাছ আমাদের রসনা তৃপ্তি ঘটিয়েছিল । 

এইভাবে কয়েকটি দিন সুন্দরবনে প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে আমরা পুনরায় নিজেদের জীবনে ফিরে এলাম । ফিরে আসার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম জলপথকে । অর্থাৎ সুন্দরবন থেকে সরাসরি লঞ্চে করে পুনরায় শহরে ফিরে আসা । সেই অভিজ্ঞতাও অদ্ভুত সুন্দর ছিল। 

প্রকৃতির এই পরম আশ্রয়ে ওই কয়েকটি দিন আমার পরবর্তী সারা বছরের জন্য বাঁচার রসদ জুগিয়ে দিল । সেজন্যই হয়তাে আজও রাতে শহরের ঘরের নরম বিছানায় ঘুমাতে গেলে লঞ্চে কাটানাে রাতের সেই জোছনাময় জঙ্গলের কথা কিংবা ট্রি – হাউজের জানালা থেকে পূর্ণিমার রাতে বাঘ দেখার স্মৃতি মনে ভেসে আসে । এখানেই ভ্রমণের প্রকৃত সার্থকতা ।

Tag:ষষ্ঠ /৬ষ্ট শ্রেণির নবম/৯ম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১,নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অথবা কারাে কাছ থকে শােনা একটি ভ্রমণ কাহিনির বর্ণনা দিয়ে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি নিবন্ধ রচনা কর,Class 6 six 9 week Bangla Assignment Answer 2021 

Leave a Comment