ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে,
ধ্বনি-কাছে ঋণী সে যে গাছে ধরা পড়ে
আত্মসুখপরায়ণ, সুযোগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়েও তা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে অন্যের ঋণ স্বীকার করলে বুঝি বা নিজেদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ হয়ে যাবে। তাই তারা উপকারীর ঋণ স্বীকারের চেয়ে তাদের নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এ ধরনের আচরণ হীনতার পরিচায়ক ও নিন্দনীয়।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
প্রতিধ্বনির নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই। ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির উৎপত্তি। অথচ প্রতিধ্বনি ধ্বনির এ ঋণ অস্বীকার করে। বিচিত্র মানবচরিত্রে এরকম অকৃতজ্ঞতার প্রতিকৃতি কখনো কখনো সুস্পষ্টভাবে বিধৃত হয়। অকৃতজ্ঞ লোকেরা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না, বরং পরিহাসের মাধ্যমে নিজের হীনতা প্রকাশ করে থাকে।
ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির জন্ম, ধ্বনি না থাকলে প্রতিধ্বনির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। কোনো নির্জন পাহাড়ের গুহায় বা বড় বাড়ির নির্জন বিশাল প্রকোষ্ঠে যদি কোনো ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সে-ধ্বনি সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়, প্রতিধ্বনিত হয় প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে। এ জন্য প্রতিধ্বনির সবসময় ধ্বনির কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা। কিন্তু প্রতিধ্বনি নিজের অস্তিত্বের উৎস ধ্বনিটির কথা স্বীকার করতে চায় না। কারণ, এতে তার নিজের ঋণ প্রকাশ হয়ে পড়বে। প্রতিধ্বনি অনুদার ও সংকীর্ণমনা। সে তার আসল পরিচয় গোপন করে উপকারীর উপকার অস্বীকার করে। প্রতিধ্বনি নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্যে ধ্বনিকে সর্বদা ব্যঙ্গ করে। তার এই পরিহাসের পেছনে আছে সত্য গোপন করার প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিধ্বনি যে ধ্বনির কাছে ঋণী এ- বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্যে ধ্বনিকে সে উপহাস করে। উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করার প্রবণতা আমাদের বাস্তবজীবনে প্রায়ই দেখা যায়। আত্মসুখপরায়ণ, সুযোগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়েও তা স্বীকার করতে চায় না। প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে অপরের কাছে বাহাদুারি লাভ করতে চায়। অন্যের কাছে ঋণ স্বীকার করাকে তারা দুর্বলতা মনে করে। যে উৎস থেকে সে উপকৃত হয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে তাদের নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এতে তার নিজের মানমর্যাদা বাড়াবে বলে সে মনে করে। আসলে মন এমন অনুদান থাকলে কোনো- না কোনোভাবে তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং সে যে নীচ তা সহজেই প্রমাণিত হয়।
যে- উৎস থেকে নিজের অস্তিত্ব গড়ে ওঠেছে তার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত- তা যতই ক্ষুদ্র হোক। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কোনোভাবেই হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়।