দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর
সভ্যতা মানুষকে যেমন অনেক কিছু দিয়েছে, তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। পরিভোগের নানা উপকরণ মানুষের জীবনে এখন ছড়ানো, কিন্তু নগর সব্যতার জঠরে বস্তুভারের বেড়াজালে মানুষ হারিয়েছে নিসর্গবেষ্টিত জীবনের শান্ত সৌন্দর্য। হারিয়েছে প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে দেহ মনের অবাধ ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের সুযোগ। মানুষের জীবনে এসেছে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা। আধুনিক সভ্যতার পাষাণ-পিঞ্জরে অবরুদ্ধ মানুষ মুক্তি প্রত্যাশায় আবার উন্মুখ হয়ে উঠেছে প্রকৃতিচালিত হৃত জীবনকে ফিরে পাওয়ার জন্যে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : সৃষ্টির প্রথমে মানুষ ছিল অরণ্যচারী। তারপর মানুষ এল সভ্যতার এ যুগে। কিন্তু মানুষ সভ্যতার শীর্ষে উঠে যাওয়ার পরেও পূর্ব পুরুষের মতই কিছুটা প্রীতি অনুভব করে।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রাচীন সভ্যতা ছিল গ্রামীণ। তাই প্রাচীন। তাই প্রাচীন সভ্যতা এবং আধুনিক নাগরিক সভ্যতার মধ্যে ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। মানুষের আদিম বাসস্থান ছিল অরণ্যে। এ অরণ্যের পটভূমিতে প্রকৃতির দান ছিল অফুরন্ত। উদাহরণস্বরূপ, বাতাস উন্মুক্ত প্রান্তর, ধীর স্রোতা তটিনী আর সীমাহীন নীল আকাশ। সেখানে মানুষের মনকে মোহমুক্ত করে উড়বার শক্তি দিত এবং কল্পনাকে দিত গতি। তখন মানুষের আকাঙ্খা ছিল খুবই সীমিত-বর্তমানের মত এত রেষারেষি, এত বিদ্বেষ তখন ছিলনা।
বর্তমানে মানুষ উন্নতির শীর্ষদেশে উঠছে। আর এজন্য চলছে প্রতিযোগিতা। দিকে দিকে চলছে হানাহানি। কিন্তু অরণ্যে সব হানা-হানি, রেষা-রেষি নেই বলে অরণ্যে জীবন যাপন যথার্থ আনন্দ পাওয়া যায়। তাই লক্ষ-কোটি বছর পরেও মানুষ অরণ্যের প্রতি টান অনুভব করছে, চাইছে ফেলে আসা সে দিনগুলোতে ফিরে যেতে।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সভ্যতার যুগে মানুষ আজ শান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই মানুষ আবার নির্ভেজাল জীবনের অন্বেষণ করছে।