পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুর দিকে তাপ প্রবাহিত হয়। আবার একই বস্তুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশেও তাপের প্রবাহ হয়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাপের চলাচলকে তাপ সঞ্চালন বলা হয়।
তাপ সঞ্চালনের উপায় এবং তাদের মধ্যে পার্থক্যঃ
তাপ, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চালিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালনের মূলত তিনটি উপায় আছে:
১. পরিবহন (Conduction)
পরিবহন হলো কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় পদার্থের কণাগুলো নিজেদের জায়গায় থেকে কাঁপতে থাকে এবং তাদের পাশের কণাগুলোকে তাপ দেয়। এইভাবে তাপ ধীরে ধীরে পদার্থের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সঞ্চালিত হয়।
উদাহরণ: একটি ধাতব চামচের এক প্রান্ত গরম করলে কিছুক্ষণ পর অন্য প্রান্তও গরম হয়ে যায়।
২. পরিচলন (Convection)
পরিচলন হলো তরল বা বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত কণাগুলো হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ঠান্ডা কণাগুলো নিচে নেমে আসে। এইভাবে তরল বা বায়ু উত্তপ্ত হয়।
উদাহরণ: একটি পাত্রে পানি গরম করলে পাত্রের তলা থেকে উঠে আসা উত্তপ্ত পানি উপরে উঠে এবং ঠান্ডা পানি নিচে নেমে আসে।
৩. বিকিরণ (Radiation)
বিকিরণ হলো তাপের সরাসরি সঞ্চালনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তাপ তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়।
উদাহরণ: সূর্যের তাপ বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে পৌঁছায়।
তাপ সঞ্চালনের উপায়গুলোর মধ্যে পার্থক্যের সারসংক্ষেপ:
উপায় | বর্ণনা | মাধ্যম | উদাহরণ |
---|---|---|---|
পরিবহন | কঠিন পদার্থে কণাগুলোর কম্পনের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন | কঠিন পদার্থ | ধাতব চামচ |
পরিচলন | তরল বা বায়বীয় পদার্থের কণাগুলোর স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন | তরল বা বায়ু | পানি গরম করা |
বিকিরণ | তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন | কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন নেই | সূর্যের তাপ |
তাপ সঞ্চালন প্রক্রিয়ার প্রকারভেদ
তাপ সঞ্চালন প্রক্রিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ
ক) পরিবহন (Conduction)
খ) পরিচলন (Convection) এবং
গ) বিকিরণ (Radiation)।
তাপ সঞ্চালনের পরিবহন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে পদার্থের অনুগ্রহ তাদের নিজস্ব জায়গা পরিবর্তন না করে শুধুই স্পন্দনের মাধ্যমে এক অনু তার পাশেরটা প্রদান করে পদার্থের উষ্ণতম অংশ থেকে শীতলতম অংশে তাপ সঞ্চালিত করে সেই পদ্ধতিকে পরিবহন বলে।
তাপ পরিবহনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। যে মাধ্যমে অণুগুলো যত বেশি শুদ্ধ সেখানে পরিবহন তত বেশি হয়। কঠিন পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপের পরিবহন সবচেয়ে বেশি। তরলে কঠিন এর চেয়ে কম এবং বায়বীয় পদার্থে সবচেয়ে কম।
আর শূন্যস্থানে কোনো পরিবহনই হয় না।
তাপ সঞ্চালনের পরিচলন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে তাপ কোন পদার্থের অণুগুলো চলাচলের দ্বারা উষ্ণতার অংশ থেকে শীতল রঙ সঞ্চালিত হয় তাকে পরিচালন বলে।
এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে তরল ও বায়বীয় পদার্থগুলোতে এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। তাপ গ্রহণ করে পদার্থের উষ্ণতা অংশের অণুগুলো শীতল অংশের দিকে প্রবাহিত হয়। এভাবে অণুগুলো স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে নিউজ গতির সাহায্যে তাপ সঞ্চালিত করে।
তাপ সঞ্চালনের বিকিরণ কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে তাপ যার মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয় তাকে বিকিরণ বলে।
এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হতে কোন প্রকারের মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন- কাঁচ, কোয়ার্টজ ইত্যাদিতে এ ধরনের বিকিরণ হয়।