টাউ টাউ বলি তারে

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। নতুন বছর মানেই আনন্দ আর খুশির ফোয়ারা। এত সব খুশি আর প্রাপ্তির মধ্যে গণিতশাস্ত্রও পিছিয়ে নেই উৎসব আর দিবসের আয়োজনে।

পাই সম্বন্ধে তোমরা আশাকরি মোটামুটি সবাই জানো। বিশেষত: মাধ্যমিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের তো ভালোই বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছে এর সাথে! তাই না? আচ্ছা তোমরা বলতে পারবে, পাই কি? হ্যা বলছি শোনো। বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকেই পাই বলা হয়। π একটি ধ্রুব সংখ্যা। অর্থাৎ যেকোন একটি বৃত্তের পরিধি এবং একই বৃত্তের ব্যাসের অনুপাতের মান সর্বদাই একই হবে। এর মান 3.141592…..। পাই এ মান 3.14 অনুযায়ী বছরের তৃতীয় মাস মার্চের ১৪ তারিখে পাই দিবস পালন করা হয়। টাউ এর কথাটা এখান থেকেই চলে আসে। কিভাবে? শোন তাহলে-

টাউ টাউ বলি তারে

পাই আর টাউ হচ্ছে দু বন্ধু। পাইয়ের মান যখন হল 3.14। তখন টাউ হিংসা করে বলে উঠলো আমি তার চেয়ে ডাবল মান নিবো। তখন টাউ মান নিল 6.28। আবার দু জনের অনুপাতেরও একটি বিরাট ইতিহাস আছে। পাইয়ের 3.14 অর্থাৎ 3 টাকে যদি আমরা মাসের ক্রম ও 14 সংখ্যাটিকে যদি তারিখ ধরি তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পাই দিবস পালিত হয় প্রতি বছরের 14 মার্চ। তাহলে টাউয়ের মান তো 6.28। তাহলে এটি কোন সময় পালিত হবে? হুমম… ঠিক ধরেছ। জুন মাসের ২৮ তারিখ। মজার ব্যাপার না!

ইতিহাসের পরিক্রমায় ব্যাবিলন থেকে প্রা্ত খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০-১৯০০ সালের একটি মৃৎখণ্ডে π এর মান দেখানো হয়েছে 25/8 বা 3.1250 যা π এর প্রকৃত মানের চেয়ে মাত্র 1% ছোট। তাছাড়া π এর মান সূক্ষ্মভাবে নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সূত্র, সমীকরণ, ধারা প্রচলিত হয় এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে জন হেইনরিখ ল্যাম্বার্ড কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়ে পাই একটি অমূলদ সংখ্যা।

π এর মান অনুযায়ী একটি বৃত্তের কেন্দ্রে 2π রেডিয়ান কোণ যা বৃত্তের কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন হয়। π এর সহগ হিসেবে 2 একটা বাহুল্য এবং এই বাহুল্য থাকা যুক্তিসঙ্গত নয়। বিভিন্ন সমীকরণে এই সহগটির জন্য জটিলাবস্থা তৈরি হয়।তাই এই জটিলাবস্থা নিরসনকল্পে বিভিন্ন সমীকরণে আমরা যদি ধ্রুবক হিসেবে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত না নিয়ে পরিধি ও ব্যাসার্ধের অনুপাত নিই তাহলে নতুন যে ধ্রুবক পাওয়া যাবে তাই টাউ। আর এ ধ্রুবকটির মান-2π=6.2831853। পাইয়ের মানের এক্কেবারে দ্বিগুণ! তাই না?

২০০১ সালে বব প্যালাইস নামক একজন গণিতবিদ একটি জার্নালে লিখেন, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত না নিয়ে যদি পরিধি ও ব্যাসার্ধের অনুপাত নেওয়া হয় তাহলে গাণিতিক সমীকরণ এবং গণনাসমূহ আরো সহজ হয়ে যাবে। তাঁর প্রথম যুক্তি, বৃত্তীয় একক অনুযায়ী একটি বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাণ 2π রেডিয়ান। কিন্তু যদি τ দিয়ে 2π কে প্রতিস্থাপিত করি তাহলে এর মান হবে τ রেডিয়ান। অতিরিক্ত 2 উপেক্ষা করতে পারায় গণিতের অনেক সমীকরণ আরো সরলাকৃতির হয়ে যাবে।

এই নতুন অনুপাতটির জন্য একটি প্রতীক প্রস্তাব করে একে নাম দেন one turn বা turn যেহেতু একটি বৃত্তে একবার ঘুরে আসলে কেন্দ্রে এই পরিমাণ কোণ উৎপন্ন হয়।

বব প্যালাইসের দেওয়া প্রতীকটি অপ্রচলিত এবং কিছুটা অদ্ভুত হওয়ায় পরবর্তীতে ২০১০ সালে মাইকেল হার্টল এর নাম τ প্রস্তাব করেন এবং একদল গণিতবিদ τ কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে এর ব্যাপক প্রচারণা হিসেবে পোলার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার কথা উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।

বন্ধুরা, পরবর্তীতে আমরা পোলার স্থানাঙ্কের বিষয়ে বিস্তারিত কথা জানব। τ এর প্রচলন সর্বত্র চালু করার জন্য τ পক্ষের গণিতবিদ এর সরলীকরণের মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার π পক্ষের গণিতবিদগণও তেমনি τ ব্যবহার করে অনেক সমীকরণের জটিলাকৃতি দেয়েছেন। তাই এত তাড়াতাড়ি পাই আর টাউ এর দ্বন্দ্ব অবসানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না! তবে টাউ যদি জিতেও যায় তারপরেও সর্বত্র এর প্রচলন কবে থেকে হতে পারে সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ সারা পৃথিবীর সকল পাইকে টাউ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা যেনতেন কাজ নয়।

পাই না টাউ? এ নিয়ে সকল জায়গাতেই আলোচনা সমালোচনা চলছে এবং এ প্রশ্নে গণিতশাস্ত্রের গণিতবিদগণেরাও দ্বিধাবিভক্ত। এই দ্বন্দ্ব আরো প্রবল হয়ে ২০১০ সালের ২৮ জুন থেকে টাউ পক্ষের গণিতবিদগণ π দিবসের মতো করে τ দিবস ঘোষণা করে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এটাকে উদযাপন করে আসছেন।

আমার লেখনী এ পর্যন্তই না হয় যাক! তবে প্রিয়বন্ধুরা পাই আর টাউ তোমাদের উদ্দেশ্যে কিন্তু কিছু বার্তা দিতে চাই। আর তা হলো তোমরা কার পক্ষে? তোমাদের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তই পারে পাই ও টাই দু বন্ধুর দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে, কি বলো?

রাজশাহী

SSC পরীক্ষার্থী – ২০২২

Leave a Comment