খুদে গল্প : জয়ের পথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা

“জয়ের পথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা” শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

জয়ের পথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব
বিলীন হয়ে যায়। সবার মনে একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দানা বাঁধে। কিন্তু পশ্চিম
পাকিস্তানিদের দুঃশাসন দেখতে তখনও অনেক বাকি। ২রা মার্চ রাতে তারা নির্বিচারে
মানুষ হত্যা করতে শুরু করে। প্রথমে আক্রান্ত হয় ঢাকাসহ অন্যান্য শহর। তারপর এ
হত্যালীলা আস্তে আস্তে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। পণ্ডিতগ্রামে সকল ধর্মের
মানুষের সহাবস্থান থাকলেও এ সময় থেকেই আস্তে আস্তে অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে।
গ্রামে যুবক ছেলেদের ওপর একদল মানুষ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে শুরু করে। অবশেষে ২রা মে
পণ্ডিতগ্রাম পাকিস্তানি সৈন্য ও দেশীয় রাজাকারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
হত্যাযজ্ঞ থেকে নারী পুরুষ শিশু কেউই বাদ যায়নি। মানুষের এ শোচনীয় অবস্থা দেখে
গ্রামের কয়েকজন যুবক যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।তারা সবাই পরস্পরের ভালো
বন্ধু। অতি সঙ্গোপনে দেশীয় রাজাকারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা গ্রাম ত্যাগ করে।
রাজাকাররা অবশ্য তাদের অনেক খোঁজ করে, কিন্তু কোনো কূলকিনারা পায় না। অনেক পথ
পাড়ি দিয়ে ছেলেগুলো ভারতের আগরতলায় গিয়ে পৌঁছে। সেখানে তারা নিজেদের মতো
অনেককে খুঁজে পায়। প্রায় সবাই একই কারণে ঘর ছেড়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার
স্বজনদের মৃতদেহ চোখের সামনে দেখে এসেছে। সবার মধ্যে একই প্রত্যয়, একই
প্রতিজ্ঞা— যেভাবেই হোক দেশকে স্বাধীন করতে হবে। ওই অত্যাচারী নরপিশাচদের হাত
থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। শুরু হয় তাদের গেরিলা ট্রেনিং। যুদ্ধের
নানারকমের কৌশল শেখানো হয় তাদের। বেশিরভাগ শিক্ষাই দেওয়া হয় গোপনযুদ্ধের।
ট্রেনিং করার সময় ছেলেগুলো প্রাণ দিয়ে হলেও দেশকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করে।
তারপর ছোট ছোট উপদলে তারা অতি গোপনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে। সবচেয়ে
চৌকষ দলটি ঢাকায় অপারেশন চালানোর দায়িত্ব পায়। এ দলে পণ্ডিতগ্রামের সেই
ছেলেগুলোও ছিল। তারা প্রথমে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধরে মিলিটারিদের অবস্থানগুলো দেখে
নেয়। তারপর সে অনুযায়ী তাদের আক্রমণের পরিকল্পনা করতে থাকে। অবশেষে চূড়ান্ত
আক্রমণের পরিকল্পনা করে তারা শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই
১০-১২ জন মিলিটারি প্রাণ হারায়। এভাবে দু-এক দিন পরপরই ঢাকা শহর গেরিলাদের
আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী পদে পদে
গেরিলাদের হাতে মার খেতে থাকে। এরা কোথা থেকে আসে আবার কোথায় মিলিয়ে যায় তার
কোনো হদিশ স্তানিরা করতে পারে না। রাস্তায় লোক দেখলেই তাদের ধরে এনে গেরিলাদের
ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে পাকিস্তানিরা। কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সদুত্তর পায় না। ফলে
গেরিলা আক্রমণ চলতেই থাকে। কখনো রাস্তায়, কখনো মাঠে, কখনো বা গলির ভেতরে আচমকাই
মিলিটারিরা আক্রমণের শিকার হয়। কখনো পুরো ইউনিট গেরিলাদের হাতে মারা পড়ে, আবার
কখনো দু-একজন মারাত্মক আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। প্রতিদিন এভাবেই গেরিলা আক্রমণ
চলে আর একটু একটু করে স্বাধীন দেশের স্বপ্নটা সত্যি হতে থাকে।

Leave a Comment