ঔষধের ঝামেলা বাদ! গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ ও কার্যকর উপায়


 

গ্যাস্ট্রিক,গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ,গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়,গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গ্যাস্ট্রিক একটি কমন ও বিরক্তিকর সমস্যা।
ছোট-বড় সবাই কোনো না কোনোভাবে এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভোগে। মূলত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস,
অতিরিক্ত মসলা ও ফাস্টফুড খাওয়া, মানসিক চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন গ্যাস্ট্রিক
সমস্যার প্রধান কারণ। বেশিরভাগ মানুষ গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত গ্যাসের
ট্যাবলেট খান। এটা দীর্ঘমেয়াদে বড় ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু জানেন কি? কিছু সহজ ঘরোয়া
উপায় অনুসরণ করলে ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর করা সম্ভব! আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে
প্রাকৃতিক ও কার্যকরীভাবে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় জানাবো যা আপনাকে গ্যাস্ট্রিক
সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি দিতে পারে। চলুন তাহলে এখন গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক
ও কার্যকরী উপায়গুলো জানা যাক।

গ্যাস্ট্রিক

গ্যাস্ট্রিক অর্থ হল অম্ল। এটি একটি
অস্বিস্তিকর রোগ। মাঝে মাঝে এই রোগটি ভয়ানক আকার ধারণ করে। এর কারণে অনেকের মৃত্যুও
হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় গ্যাস্ট্রিক আসলে কোন রোগ নয়। বিজ্ঞান বলে
গ্যাস্ট্রিক হল পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি। পাকস্থলী
, ডিওডেনাম
ও ইসোফেগাস এ যদি অ্যাসিডের কারণে ক্ষত হয় তখন এটাকে বলে পেপটিক আলসার ডিজিজ।
বিজ্ঞানের ভাষায় গ‍্যাস বা গ্যাস্ট্রিক বলে কোন রোগ নেই। তবে হ‍্যা
, যদি কারো গ‍্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে মনে করতে হবে তার পেপটিক আলসার
আছে। আর এ রোগটি কখনও এ্যালোপাথিক ঔষধে পরিপূর্ণভাবে নিরাময় হয় না। কিন্তু অনেকটা
নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করা যায়।

গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ

প্রত‍্যেক রোগের লক্ষণ থাকে।
গ্যাস্ট্রিক
 রোগেরও অনেক লক্ষণ আছে। আপনি যদি নিন্মের লক্ষণগুলো কারো মধ্যে দেখেন তাহলে
নিশ্চিত সে গ্যাস্ট্রিক রোগে আক্রান্ত। এখন গ্যাস্ট্রিক
 রোগের লক্ষণগুলো জানা যাক।

১। ক্ষুধামন্দা।

২। পেটের উপরের অংশে ব্যথা।

৩। বুকের ডানপাশে ব‍্যথা।

৪। পিঠে ব‍্যথা।

৫। বুক জ্বালাপোড়া করা।

৬। টক টেকুর উঠা।

৭। বমি বমি ভাব।

৮। পেট ফাপা।

৯। পেট ফোলা ভাব।

১০। গলা টানা।

গ‍্যাস্ট্রিক দূর করতে মানুষ এখন গ‍্যাসের
ঔষধ নির্ভর হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ মানুষের প্রায় প্রতিদিন গ‍্যাসের ট‍্যাবলেট খেতে
হয়। এজন্য বাজারে এখন সবচেয়ে বিক্রিত ঔষধ হল গ‍্যাসের ট‍্যাবলেট। কারো একটু গ‍্যাস
হলেই ছুটে যায় ঔষধের দোকানে এবং কিনে আনে গ‍্যাসের ট‍্যাবলেট। অথচ গ‍্যাস্ট্রিক
দূর করার উপায় যে বাড়িতে হাতের কাছে আছে তা তারা জানে না। আপনি যদি গ‍্যাস্ট্রিক
দূর করার ঘরোয়া উপায় না জানেন তাহলে নিচের থেকে জেনে নিন।

পর্যাপ্ত পানি পানি পান:

পানির অপর নাম জীবন। পেটের গ‍্যাস দূর
করতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 মূলত পানি
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্র পরিস্কার রাখে। তাই পেটের গ‍্যাস কমাতে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করবেন। আর প্রতিবার ভাত খাওয়ার
পূর্বে এবং পরে পানি পান করবেন। কখনও ভাত খাওয়ার মাঝে পানি পান করবেন না। দেখবেন গ‍্যাসের
সমস্যা থাকলে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। আর যাদের গ‍্যাসের সমস্যা আছে তারা
কমপক্ষে প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করবেন। এটা নিয়মিত করতে পারলে আপনার নিকট থেকে গ‍্যাস চিরতরে বিদায় নিবে।

খাদ্য চিবিয়ে খাওয়া:

বেশিরভাগ মানুষ কোন খাদ্য খাওয়ার সময়
তাড়াহুড়ো করে এবং খাদ্য ভালভাবে চিবিয়ে খায় না। ফলে ঐ খাদ্য পাকস্থলীতে যাওয়ার পর
হজম হতে অনেক সময় লাগে। এর জন্যও পেটে গ‍্যাস হয়। তাই খাদ্য খাওয়ার সময় মোটেও
তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়
, বরং খাদ্য খাওয়ার সময় আস্তে আস্তে
খাওয়া উচিত এবং খাদ্য ভালভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। খাদ্য ভালভাবে চিবিয়ে খেলে পেটে
গ‍্যাস হয় না। আর হলেও খুব দ্রুত কমে যায়।

ভাত খাওয়ার পর দই খাওয়া:

গ‍্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া যাদুকরী
টোটকা হল দই। গ্যাস্ট্রিক হওয়ার অনতম কারণ হল পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া। দই এই
ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে দই খেলে পেটের গ‍্যাস দ্রুত কমে যায়। এছাড়া দইয়ের
মধ্যে ল্যাকটোব্যাকিলাস
, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা
ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে এবং একই সাথে
খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই প্রতিদিন প্রত‍্যেকবার খাওয়ার পর দুই/তিন চামচ
দই খেলে গ‍্যাসের সমস্যা থাকে না। আর থাকলেও চিরতরে দূর হয়ে যায়।

লবন বা মধু দিয়ে আদা খাওয়া:

গ‍্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করার একটি
চমৎকার উপায় হল লবন বা মধু দিয়ে আদা খাওয়া। আদায় আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান
যা খুব দ্রুত পেট ফাঁপা
, বমি সমস্যা, বদ হজম ও পেটে গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। তাই দ্রুত গ‍্যাস্ট্রিক সমস্যা
দূর করতে হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান অথবা
 
আদার
রসের সাথে মধু মিশিয়ে খান। এতে মুহূর্তের মধ্য পেটের গ‍্যাস কমে যাবে।

কাচা রসুন খাওয়া:

যৌন শক্তিবর্ধক রসুন পেটের গ‍্যাস
কমাতেও বিরাট ভূমিকা পালন করে। আহলে গ‍্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে রসুনের কোন জুড়ি
নেই। তাই যখনই পেটে গ‍্যাস হবে এক কোয়া কাচা রসুন চিবিয়ে খাবেন। খাওয়ার সাথে সাথেই
গ‍্যাস কমতে শুরু করবে। আর নিয়মিত কাচা রসুন খেলে গ‍্যাস্ট্রিক চিরতরে বিদায় নিবে।
তাই সকালে খালি পেটে এক-দূই কোয়া কাচা রসুন খাওয়ার অভ‍্যাস করেন। এতে গ‍্যাসের
সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। সাথে যৌনশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।

নিয়মিত শশার সালাদ খাওয়া:

পেট গরম হলে পেটে গ‍্যাস হয়। পেট গরম
হয়ে পেটে গ‍্যাস হলে পেটের বাইরে ঠান্ডা পানি দিলে গ‍্যাস অনেকটা কমে। আর যদি
পেটের ভিতর ঠান্ডা রাখা যায় তাহলে গ‍্যাস কম হয়। শশা পেট ঠান্ডা রাখার এক অসাধারণ
খাদ্য। তাই পেট ঠান্ডা রাখতে এবং পেটের গ‍্যাস কমাতে নিয়মিত তিনবার খাওয়ার সময়
শশার সালাদ খান এবং চিরতরে গ‍্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পান।

মাঠা খাওয়া:

পেটের গ‍্যাস কমাতে দুধ ও মাখনের তৈরি
মাঠা ইসিমোপ্রাজলের মত কাজ করে। তাই কারো পেটে অতিরিক্ত গ‍্যাস হলে সাথে সাথে এক
গ্লাস মাঠা খেয়ে হাটতে থাকুন। মাঠা খাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে পেটের গ‍্যাস দূর হয়ে
যাবে।

এছাড়া গ‍্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে
পেপে
, কলা, লবঙ্গ, আনারস,
পুদিনা পাতা, অ্যালোভেরা, ডাবের পানি, আলুর রস ইত্যাদিও খেতে পারেন। এসব
খাবারও পেটের গ‍্যাস কমাতে বা গ‍্যাস্ট্রিক দূর করতে যাদুর মত কাজ করে। তাই গ‍্যাসের
সমস্যা সমাধানে গ‍্যাসের ট‍্যাবলেট এর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে ঘরোয়া উপায়ে উপরোক্ত
খাদ্য গুলো খেয়ে গ‍্যাস্ট্রিককে চিরতরে বিদায় জানান।

পড়তে পারেনঃ

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা
কোথায় কোথায় হয়
?

সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বুকে, পেটে
ও পিঠে হয়। এই ব‍্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশে দৌড়ে বেড়ায়। অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের
ব্যথা বুকের বামপাশেও যায়। অনেকেই এই ব‍্যথাকে হার্টের ব‍্যথা ভেবে ভুল করে এবং
বুকের বামপাশে ব‍্যথা করলে খুব টেনশন করে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন বুকের বামপাশে ব‍্যথা
করলেই হার্টের ব‍্যথা নয়। হার্টের ব‍্যথা স্হায়ী ও সুচ দিয়ে ফোটানোর মত আর গ‍্যাসের
ব‍্যথা অস্হায়ী ও চলমান।

গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে
ব্যাথা

পেটে গ‍্যাস হলে এই গ‍্যাস শরীরের
বিভিন্ন জায়গায়
 ছুটে বেড়ায়। গ‍্যাস যখন যেখানে যায় তখন সেখানে ব‍্যথা
করে। যদি গ‍্যাস পিঠে যায় তাহলে গ‍্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব‍্যথা হয়। এটা
অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুধুমাত্র গ‍্যাস্ট্রিকের ব‍্যথা পিঠে নয়
, এটা
শরীরের যেকোন জায়গায় হতে পারে। গ‍্যাস যেখানে জমা হয় সেখানেই ব‍্যথা অনুভূত হয়।

গ্যাস্ট্রিক পেট ব্যাথা

পেট ব‍্যথার প্রধান কারণ বদ হজম। বদ
হজমের কারণে গ‍্যাস্ট্রিক হয়। আর গ‍্যাস্ট্রিক হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব‍্যথা
করতে পারে। বিশেষভাবে গ‍্যাস্ট্রিকের কারণে পেট ব‍্যথা বেশি করে। এর মূল কারণ
পাকস্থলীতো পেটের মধ্যে থাকে। পাকস্থলীতে ইনফেকশন হলে বা পাকস্থলীতে এসিডিটি বেড়ে
গেলে পেট ব‍্যথা করে। তাই গ‍্যাসের ব‍্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশে গেলেও এই ব‍্যথার
কেন্দ্রবিন্দু হল পেট। যাইহোক কারো পেট ব‍্যথা করলে মনে করতে হবে ঐ ব‍্যথা হল গ‍্যাস্ট্রিক
পেট ব‍্যথা

গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা

বদ হজমের কারণে পেটে গ‍্যাস হয়। আর এই
গ‍্যাস ধীরে ধীরেবাড়তে থাকে ও উপরের দিকে উঠতে থাকে। যখন গ‍্যাস পেটের মধ্যে না
ধরে তখন বুকে জমা হয়। যখন গ‍্যাস বুকে জমা হয় তখন গ্যাস্ট্রিকের কারণে বুকে ব্যাথা
করে। অনেকের আবার হার্টের সমস্যার কারণেও বুকে ব‍্যথা করে। তাই কারো বুকে ব‍্যথা
করলে প্রথমে একটি ইসিজি করে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি আসলে হার্টের সমস্যার জন্যে
বুকে ব্যাথা নাকি গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা

পেটে গ্যাস হলে করণীয়

পেটে গ‍্যাস হলে কখনও বসে বা শুয়ে থাকা
যাবে না। প্রথমে দুধ ও মাখনের তৈরী এক গ্লাস মাঠা খেয়ে নিন অথবা একটি সারজেল-৪০
এমজি ও একটি মটিগাট একসাথে খেয়ে নিন। এরপর হাটতে থাকুন। ১০ মিনিটের মধ্যে গ‍্যাস
কমে যাবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
(Best Medicine)

সব মিলিয়ে বলা যায় যে গ্যাস্ট্রিক এখন এমন এক বিরক্তিকর কমন
সমস্যা যা প্রায় সবাইকে ভোগাচ্ছে। ফলে প্রতিদিন মানুষ ভাতের আগে গ‍্যাসের ট‍্যাবলেট
খাচ্ছে। কিন্তু গ্যাসের ট্যাবলেটের উপর এত নির্ভরশীল হওয়া কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। অথচ
খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল এর একটু পরিবর্তন করলেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি
পাওয়া সম্ভব। তাই আর নয় গ্যাস্ট্রিকের চিন্তা! হিসাব করে খাবার খান, ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত
মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, ফাস্টফুডকে না বলুন এবং ঘরোয়া গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো অনুসরণ করে গ্যাস্ট্রিক
সমস্যাকে চির বিদায় জানান। সুস্থ থাকুন,  ভালো থাকুন ও গ্যাস্ট্রিক মুক্ত জীবনযাপন
করুন।

রিলেটেড পোস্টসঃ

Leave a Comment