শরতের সকাল
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। শকালে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। শরৎ সকালের প্রকৃতির প্রসন্ন হাসি আর সুবর্ণ মােহন কান্তি দর্শনে মানুষ মাত্রই মুগ্ধ হয় । শরতের প্রকৃতির স্নিগ্ধ শান্তরূপ সকলকেই আকৃষ্ট করে।
শরতের প্রভাতে হালকা কুয়াশা আর বিন্দু বিন্দু জমে ওঠা শিশির এ ঋতুর প্রধান উপহার । এ সময় পূর্ণ যৌবনা নদী প্রাণচাঞ্চল্যে, খরতর বেগে ছুটে চলে আপন গন্তব্যে। রক্তিম সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হয়। আকাশে সারসের দল সাই সাই করে উড়ে চলে কোনাে মানস সরােবরের দিকে। সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় খণ্ড খণ্ড অসংখ্য সাদা মেঘের ভেলা। সুনীল আকাশের ছায়া পড়ে শান্ত নদীর বুকে। নদীর কোল ঘেঁষে ফোটে অজস্র কাশফুল। মৃদু বাতাসে ঢেউ খেলে যায় সেই সাদা কাশবনে। আকাশের স্নিগ্ধ সূর্যকিরণে মাঠ-ঘাট ঝলমল করে। হাঁটুজলে সাদা সাদা বক নিবিষ্ট মনে দাঁড়িয়ে থাকে। লােকালয়ে খেকশিয়াল আর বনবিড়ালের আনাগােনা বৃদ্ধি পায়। দোয়েল-কোয়েল আর বিভিন্ন পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে চারদিক। শরতের শারদীয় প্রভাতে নানা রঙের ফুল ফোটে। জুই, টগর আর মালতি ফুলের শুভ্র সৌন্দর্যে চারদিক মােহিত থাকে। শরতের প্রভাতে শিশির ভেজা শেফালি ফুল অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসের বুকে হাসে। আকাশে, বাতাসে আর দূর্বাঘাসে শরৎ তার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়। এর অপূর্ব সৌন্দর্যে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশ মােহনীয় হয়ে ওঠে।
শরতের শিশির ভেজা প্রকৃতির আস্তরণ ভেদ করে সুয্যিমামা আলাে ছড়ায়। সকালের মিষ্টি রােদ খুবই ভালাে লাগে। শরতের সকালের স্নিগ্ধ বাতাস শরীরে শিহরণ জাগায় । মাঠভরা ফসলের খেতে যখন সূর্যের প্রথম আলাে পড়ে তখন সবকিছু যেন চিকচিক করে। মােটকথা শরতের সকালের অপরূপ সৌন্দর্য এক মনােমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করে।
শরতের সকালের মনােরম পরিবেশ মানবমনকে প্রফুল্ল করে। সারা আকাশ জুড়ে বৃষ্টিহীন সাদা মেঘের বিচরণ মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। সকাল বেলার মিষ্টি রােদ মানুষের মনকে ভাবুক করে তােলে । প্রভাতে ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির কণা, বিভিন্ন গাছে গাছে ফুটে থাকা ফুলের সমারােহ, গাছে গাছে ডাকা পাখিদের কলকাকলি, বিভিন্ন ফুলের সুবাস প্রভৃতি থেকে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার তুলনা রহিত।
শরতের সকালে নানান পিঠা বানানাে বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। প্রতিদিন সকালে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে সকালবেলা পিঠা দিয়ে নাস্তা করা হয়। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের পিঠার নিমন্ত্রণ জানানাে হয় । এভাবে গ্রামে বাঙালি সংস্কৃতিকে ধরে রাখা হয়েছে সুপ্রাচীনকাল থেকে।
বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। এদেশের অধিকাংশ লােক কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্ষার পরপরই আসে শরৎকাল । তখন কৃষকরা খুব খুশি হয়। কেননা এ ঋতুতে ফসলের সম্ভাবনা জেগে ওঠে। বর্ষার দীর্ঘ সময় মাঠ-ঘাটে শুধু পানি আর পানি থাকে।কৃষক ফসলের যথাযথ পরিচর্যা করতে পারে না। তাই শরৎঋতুর আগমনে কৃষকরা আবার নতুন ফসলের আনন্দে থাকে। ঝিরঝির বাতাস ধানের খেতে ঢেউ দিয়ে যায় আর কৃষকের মনে দোলা দেয়। প্রকৃতিতে বহমান ঝিরঝির বাতাস কৃষকের সব ক্লান্তি দূর করে। তারা মনের আনন্দে জমিতে ফসলের পরিচর্যা করে আর মনে মনে সুখের স্বপ্ন বােনে।
শরতের সকাল কবি-সাহিত্যিকদের মনে বিশেষভাবে ধরা দেয়। শরতের অনাবিল সৌন্দর্য মানুষকে মােহিত করে। এ সময় বাংলাদেশ এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। বিশেষ করে শরতের সকাল সবার মন কেড়ে নেয় বিচিত্র সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়ে। তাইতাে অনেকের প্রিয় ঋতু শরৎকাল।