ইসলামী ভ্রাতৃত্ব
উপস্থাপনা:
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ঈমানের নেয়ামতের বদৌলতে আমাদের অন্তরে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেছেন। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের প্রতি, যিনি ঈমানী ভ্রাতৃত্বের নীতিমালাসমূহ পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের প্রতি, যারা আল্লাহর রাস্তার পরস্পরকে ভালোবাসতেন।
ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর নেয়ামত:
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর নেয়ামত। এ বিষয়ের দিকে আল্লাহর বাণীতে ইঙ্গিত রয়েছে, “নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই”। সেটি বংশীয় ভ্রাতৃত্বের মতো নয়; বরং তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম।
ভ্রাতৃত্বের মূলভিত্তি : ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিসমূহ নিম্নরূপ-
১. পারস্পরিক সহযোগিতা : পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, যার ওপর ভ্রাতৃত্ব -প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই সুখ-দুঃখে মুমিনদের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা বজায় রাখা জরুরি কাজ ও আবশ্যকীয় দায়িত্ব।
২. পরস্পরের কল্যাণ কামনা: এক মুমিন অপর মুমিন ভাইয়ের জন্য আয়নার মতো হওয়া উচিত। যদি তার মাঝে ভালো দেখে, তাকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করবে আর যদি ত্রুটি দেখে তাহলে গোপনে তাকে উপদেশ দিবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন, “মুমিন মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ, তিনি আরও ইরশাদ করেন, “দ্বীন হলো কল্যাণকামিতা।
৩. পরস্পর দয়া প্রদর্শন: পরস্পর দয়া প্রদর্শন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর বাণীতে এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ভালোবাসা ও দয়ামায়ায় মুমিনদের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো। যদি এর কোনো অঙ্গে ব্যথা হয় সকল অঙ্গ জাগ্রত ও জ্বরের মাধ্যমে সমব্যথী হয়”।
৪. নিজেদের মাঝে মীমাংসা: এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য অতীব জরুরি বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, “যদি মুমিনদের দুটি দল বিবাদে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের মাঝে মীমাংসা করে দাও”।
ভ্রাতৃত্বের উপকারিতা :
মুসলিম ব্যক্তির জীবনে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কেননা এটি মুসলিমদেরকে একতা ও ঐক্যের প্রতি আহ্বান করে, তাদের মধ্যকার বিভেদ দূর করে। এটি আরব-অনারব, ধনী-গরিব, সাদা-কালো, রাজা-প্রজা ও জ্ঞানী-মূর্খের মাঝে সাম্য সৃষ্টি করে।
ভ্রাতৃত্বের ধ্বংসকারী বিষয়:
হিংসা, বিদ্বেষ, গীবত, চোগলখোরী ও ভুল ধারণা এ ভ্রাতৃত্বকে ধ্বংস করে দেয়।
ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন ও দাবি:
ভ্রাতৃত্বের নিদর্শনাবলির মাঝে রয়েছে সালাম প্রচার করা, তার জবাব দেওয়া, রোগীর শুশ্রুষা করা, নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা, জানাযার পিছু পিছু যাওয়া, হাঁচির অনার দেওয়া। আর ভ্রাতৃত্বের দাবিগুলোর মাঝে রয়েছে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুর দেখাশুনা করা এবং তাদের সাহায্য করা।
ভ্রাতৃত্বের ফলাফল :
এ ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে প্রথম যুগের মুমিনগণ পৃথিবীর দিগুদিগন্ত জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি তারা বাক্যে চীনের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। এবং পাশ্চাত্যে স্পেন সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছেন।
উপসংহার।
আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে সুরে করা, পরস্পর সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ঐক্যকে সুর করা এবং মতবিরোধ ত্যাগ করা।